করোনা ভ্যাকসিন সমবণ্টনে বাংলাদেশসহ ১৫৬ দেশের চুক্তি

করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশসহ ১৫৬টি দেশ।
প্রতীকি ছবি। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশসহ ১৫৬টি দেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে ওই চুক্তি ঘোষণা করা হলেও তাতে সই করেনি দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বব্যাপী এই প্রকল্পে যোগ দেওয়া ১৫৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমান।

চলমান মহামারির মধ্যে ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’ এর হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। কোভ্যাক্স নামের এই প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড ইনোভেশন (সেপি)।

এক বিবৃতি জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কেবল ভ্যাকসিনই নয়, সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামে সবার বরাদ্দ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করবে ‘কোভ্যাক্স’।

বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ভ্যাকসিন পাওয়ার পর প্রথম দিকে স্বল্প সরবরাহের কারণে দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী ও সামাজিক বিভিন্ন সেবার সঙ্গে জড়িতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের জনসংখ্যার তিন শতাংশের মধ্যে ওই টিকা বিতরণ করা হবে। ধীরে ধীরে জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য সরবরাহ বাড়ানো হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ও কার্যকর ২০০ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উচ্চ আয়ের ৬৪টি দেশ এরই মধ্যে কোভ্যাক্সে যুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৩৫টি দেশ ও ইউরোপিয়ান কমিশনের পক্ষ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। সামনে আরও ৩৮টি দেশ এই প্রকল্পে যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ভ্যাকসিন পরিকল্পনায় দেশগুলো যোগ দিতে দেরি করছে কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস জানান, কয়েকটি দেশে নথিপত্রের কাজ চলছে এবং কয়েকটি দেশ সংসদীয় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

এদিকে, রাশিয়ার একটি সরকারি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, দেশটি যেহেতু নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি ও উৎপাদন করছে, সেহেতু তার দেশটির এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইতোমধ্যেই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন সরবরাহের বিষয়টি সুরক্ষিত করেছে।

মহামারির কেন্দ্রস্থল চীনও এই প্রকল্পের তালিকায় নেই। তবে, কর্মকর্তারা জানান, বেইজিংয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, করোনা মোকাবিলায় কোভ্যাক্স প্রকল্পসহ সামগ্রিক কর্মসূচির জন্য ৩৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তবে এখন পর্যন্ত সংস্থাটি মাত্র তিন বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। আলাদাভাবে, কোভ্যাক্সের জন্য এক দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও প্রকল্পটির জন্য আরও ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার জরুরিভাবে প্রয়োজন।

বিশ্বজুড়ে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি ও পরীক্ষা করছে।

টিকার সমবণ্টনে ১৫৬ দেশের এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে সেপি ও গ্যাভি।

গত সোমবার, জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ওই চুক্তি সম্পর্কে কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি জানান, কোভ্যাক্সই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও কোভিড-১৯ টিকার সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিওর প্রতিনিধিত্ব করছে। এর মাধ্যমে যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

সেপির প্রধান নির্বাহী ড. রিচার্প হ্যাচেট ১৫০ এর বেশি দেশের মধ্যে হওয়া ভ্যাকসিন বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরের সময়কে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago