সৌদি প্রবাসীদের আকামার মেয়াদ বাড়লো

বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের কাজের অনুমতিপত্র বা আকামার মেয়াদ আরও ২৪ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে গতকাল বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার অভিবাসী শ্রমিক। ছবি: আমরান হোসেন

বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের কাজের অনুমতিপত্র বা আকামার মেয়াদ আরও ২৪ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম নিজের ফেসবুকে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, আকামার মেয়াদ আরবি সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত (মানে আজ থেকে আরও ২৪ দিন) বর্ধিত করা হয়েছে।

প্রবাসীরা যেন নির্ধারিত সময়ে সৌদি আরবে ফিরতে পারেন সেজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে রিয়াদ এবং জেদ্দায় সপ্তাহে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়ার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি জানান, ঢাকার সৌদি আরব দূতাবাসের ভিসা অফিস রবিবার থেকে খোলা থাকবে। সেখানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নতুন নিয়মাবলী মেনে কনস্যুলার সেবা দেওয়া হবে।

সৌদি আরবে ফেরার জন্য গত কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ করছিলেন প্রবাসীরা। আজ সকাল ১১টার দিকে কয়েক হাজার সৌদি প্রবাসী রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন । তারা মন্ত্রণালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। পরে সৌদি প্রবাসীদের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান।

আধ ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর, মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। সোমবারের পর তিনি এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানাবেন, যোগ করেন তিনি।

ক্ষুব্ধ ও হতাশ সৌদি প্রবাসীরা আজ নিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল বিক্ষোভের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেন তারা। পরে প্রবাসীদের ইকামা-ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়াতে সৌদি আরব সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। এরপর সৌদি এয়ারলাইনসকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ বিমানকে ফ্লাইট চালানোর অনুমতির বিষয়টি আটকে ছিল।

প্রবাসীরা বলছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে না যেতে পারলে তাদের চাকরি থাকবে না, ভিসায়ও জটিলতা হবে। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর কাওরান বাজারে সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের টিকিট বুকিং অফিসের সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেন।

বৈশ্বিক মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে লকডাউনের কারণে বিভিন্ন দেশের প্রায় লাখখানেক বাংলাদেশি দেশে এসে আটকা পড়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে৷ এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২০ লাখ বাংলাদেশি৷ বাংলাদেশের প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ দেশও সৌদি আরব।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের আগ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ লোক বিদেশ থেকে এসেছেন৷ এর মধ্যে অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ প্রবাসী কর্মী৷ এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজার ৬৬১, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৭ হাজার ৩২১, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ হাজার ৯৪২, কাতার থেকে ১৩ হাজার ৮৬৫, সিঙ্গাপুর থেকে ১২ হাজার ৩৪২, ওমান থেকে ১১ হাজার ৭৮৪, কুয়েত থেকে ৬ হাজার ১২০, বাহরাইন থেকে ৩ হাজার ৫৫৪, ইতালি থেকে ২ হাজার ৭০৩ এবং মালদ্বীপ থেকে ১৫০৯ জন দেশে এসেছিলেন৷ এদের বড় অংশই প্রবাসী কর্মী যারা আবার কাজে ফিরতে পারবেন কী না নিয়ে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন৷

অন্যদিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এপ্রিল থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পযন্ত এক লাখ ৪১ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৬৫৪ জনই ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে।

শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Election code breakers go unpunished

Election code violations are rampant ahead of the January 7 election, but the Election Commission has yet to take any punitive action against the rule breakers.

14h ago