করোনা ভ্যাকসিনের প্রকৃত অগ্রগতি কতটা?

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় তিন কোটি ১৯ লাখ মানুষ। মৃত্যু প্রায় ১০ লাখ। এই ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে সবার অপেক্ষা একটি কার্যকর, নিরাপদ ভ্যাকসিনের।
ছবি: রয়টার্স

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় তিন কোটি ১৯ লাখ মানুষ। মৃত্যু প্রায় ১০ লাখ। এই ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে সবার অপেক্ষা একটি কার্যকর, নিরাপদ ভ্যাকসিনের।

বিশ্বের নামকরা সব ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় রয়েছে।

প্রতিটি দেশই যখন মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ভ্যাকসিনের বিকল্প আর কিছুই নেই।

ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান

ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জার্মানির বায়োএনটেক ও ফাইজার, মার্কিন মডারনা ও জনসন এন্ড জনসন, চীনের সিনোভেক বায়োটেক, ক্যানসিনো বায়োলজিকস ও সিনোফার্ম এবং রাশিয়ার গামালিয়া রিসার্স ইনস্টিটিউট তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। এই নয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন বিক্রয় চুক্তিও সই করেছে।

কিভাবে কাজ করবে ভ্যাকসিন

চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিনের ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করছে তাপ বা রাসায়নিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। তাত্ত্বিকভাবে, এটি শরীরের কোনো প্রকার ক্ষতি না করেই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন এন্ড জনসন, চীনের ক্যানসিনো এবং রাশিয়ার গামালিয়া ব্যবহার করছে অ্যাডিনোভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে কাশি এবং জ্বর হয়। এই ভাইরাসটি ঘোড়সওয়ারের মতো কাজ করে রোগ প্রতিরোধক প্রোটিনকে সংক্রামক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করায়।

মডারনা, ফাইজার ও বায়োএনটেক আরএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের জিনগত কোডের নির্দিষ্ট অংশ।

পরীক্ষা

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। তাদের অর্ধেকের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এবং বাকী অর্ধেককে ভ্যাকসিন বা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না।

এই দুই ভাগের স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কতজন করোনায় সংক্রমিত হয় সেটাই পরীক্ষায় বিবেচ্য বিষয়। ভ্যাকসিন নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা যদি ভ্যাকসিন না নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ কম সংক্রমিত হয় তবেই তা অনুমোদন পেতে পারে।

সকলেরই প্রত্যাশা, এই ভ্যাকসিন যারা নেবেন তারা করোনাভাইরাস এবং এ জাতীয় কোনো ভাইরাসেই আর আক্রান্ত হবেন না। তবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গ্রহীতার শরীরে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ যেন না দেখা দেয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় নেতৃত্বদানকারী অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ‘আমরা একটি ভ্যাকসিন থেকে আসলেই যা চাই তা হলো এটি যেন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা, আইসিইউতে নেওয়া এবং মৃত্যু বন্ধ করতে পারে।’

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে ভ্যাকসিন সাময়িক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। পরবর্তী সময়েও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কেট বিঙ্গহাম বলেন, ‘আমাদের ধারণা এই ভ্যাকসিন অন্তত এক বছরের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রতি বছরই এক ডোজ করে ভ্যাকসিন নেওয়া লাগতে পারে।’

এই ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মডারনার ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রথম ডোজের পর পরের ডোজে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে ২০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবকের মাথা ব্যথা এবং জ্বরসহ উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

স্বেচ্ছাসেবকরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরায় অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে দুই বার পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

ভ্যাকসিন কেনার প্রতিযোগিতা

করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষায় সফল হওয়ার আগেই তা পাওয়ার জন্য শুরু হয়ে গেছে তুমুল প্রতিযোগিতা।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশসহ ১৫৬টি দেশ।

এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন কেনার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ ঢেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ভ্যাকসিন উৎপাদক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানসহ বেশ কিছু ধনী রাষ্ট্র এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পৃথিবীর ১৩ শতাংশ মানুষ বসবাস করলেও ইতোমধ্যে তারা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সম্ভাব্য উৎপাদনের অর্ধেক কিনে নিয়েছে।

কবে আসতে পারে ভ্যাকসিন?

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীদের ধারণা এ বছরের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আসতে পারে করোনার ভ্যাকসিন।

প্রাথমিক পর্যায়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর, কার্যকর ভ্যাকসিনের অনুমোদন পেতে এক মাসের মতো সময় প্রয়োজন হবে। প্রথমে বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সর্ব সাধারণের ভ্যাকসিন পেতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর অন্তত ছয় মাস অপেক্ষ করতে হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago