সেভিয়াকে হারিয়ে সুপার কাপের শিরোপা বায়ার্নের
ম্যাচ জুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলা বায়ার্ন মিউনিখ পিছিয়ে পড়েছিল শুরুতে। প্রথমার্ধের মাঝপথে সমতায় ফিরলেও সেভিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক গোল পেতে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময় পর্যন্ত। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে হ্যান্সি ফ্লিকের দলের ত্রাতা হাভি মার্তিনেজ।
বৃহস্পতিবার রাতে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে শেষ হাসি হেসেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাধারী বায়ার্ন। উয়েফা ইউরোপা লিগের চ্যাম্পিয়ন সেভিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সুপার কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে তারা।
আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লুকাস ওকাম্পোস হুলেন লোপেতেগির দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর সমতা টানেন জার্মান মিডফিল্ডার লিয়ন গোরেৎস্কা। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে ব্যবধান গড়ে দেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্তিনেজ।
দ্বিতীয়বারের মতো এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলো জার্মান ক্লাব বায়ার্ন। এর আগে ২০১৩ সালে শিরোপা জিতেছিল দলটি। অন্যদিকে, ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই নিয়ে টানা পাঁচবার সুপার কাপের ফাইনালে হারল স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া।
করোনাভাইরাস বিরতির পর গত মাসে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা ফিরলেও স্টেডিয়ামে দর্শক প্রবেশের অনুমতি ছিল না। তবে এই ম্যাচে ২০ হাজার দর্শককে মাঠে বসে খেলার সুযোগ দেয় উয়েফা। যদিও হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ।
প্রথমার্ধের ১৩তম মিনিটে সেভিয়াকে এগিয়ে দেন ওকাম্পোস। মাথা ঠাণ্ডা রেখে স্পট-কিক থেকে গড়ানো শটে বায়ার্ন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যারকে পরাস্ত করেন তিনি। ইভান রাকিতিচকে ডি-বক্সের ভেতরে ডেভিড আলাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
৩৪তম মিনিটে গোছানো আক্রমণে গোল শোধ করে বাভারিয়ানরা। টমাস মুলারের ক্রস পা দিয়ে নামিয়ে লিওন গোরেৎস্কাকে খুঁজে নেন রবার্ত লেভানদোভস্কি। ডান পায়ের দারুণ ভলিতে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই ফের এগিয়ে যেতে পারত সেভিয়া। বাম প্রান্ত থেকে সুসোর ক্রসে পা ছুঁইয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের স্ট্রাইকার লুক ডি ইয়ং। তবে গোলপোস্টের দিকে ধাবিত হতে থাকা বল অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন নয়্যার।
এরপর ১২ মিনিটের মধ্যে দুবার সেভিয়ার জালে বল পাঠিয়েছিল বায়ার্ন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো ম্যাচের স্কোরলাইনে কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি। ৫১তম মিনিটে পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানদোভস্কির লক্ষ্যভেদ অফসাইডের কারণে এবং ৬৩তম মিনিটে জার্মান উইঙ্গার লেরয় সানের গোল ফাউলের কারণে বাতিল করে দেন রেফারি।
মাঝে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় গত মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল জেতা বায়ার্নের। ৫৮তম মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে সার্জ ন্যাব্রির শট গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো ফিরিয়ে দেওয়ার পর পেয়ে যান সানে। কিন্তু তার শট প্রতিহত হয় সেভিয়ার রক্ষণ দেয়ালে।
৬৬তম মিনিটে আলাবার ফ্রি-কিক গোলপোস্টের খানিকটা উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। দশ মিনিট পর লুকাস হার্নান্দেজের ভলিও লক্ষ্যে থাকেনি। ফলে গোলের অপেক্ষায়ও ফুরায়নি বায়ার্নের।
খেলার ধারার বিপরীতে ৮৭তম মিনিটে জয়সূচক গোল প্রায় আদায় করেই নিয়েছিল সেভিয়া। পাল্টা আক্রমণে নয়্যারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন বদলি স্ট্রাইকার ইউসুফ এন-নেসিরি। তার বাঁ পায়ের শট ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আবারও নিজের জাত চেনান জার্মান তারকা।
৯০তম মিনিটে মরক্কোর এন-নেসিরি মাঝমাঠ থেকে নিয়েছিলেন শট। তার উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টা অবশ্য পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি নয়্যারকে। ফলে ১-১ ব্যবধানে শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের খেলা।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে এন-নেসিরিকে ফের হতাশ করেন নয়্যার। তার মাটি কামড়ানো শট বায়ার্ন অধিনায়কের বাড়ানো পায়ে লেগে বাধা পায় পোস্টে। যদিও টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায় যে, অফসাইডে ছিলেন এন-নেসিরি।
৯৯তম মিনিটে মাঠে প্রবেশ করা মার্তিনেজ পাঁচ মিনিটের মধ্যে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন। সতীর্থের কর্নার থেকে বল পাওয়া আলাবার শট বোনো রুখে দিলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। নিখুঁত হেডে সেভিয়ার হৃদয় ভেঙে বায়ার্নকে আনন্দে ভাসান মার্তিনেজ।
এরপর দলকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ এসেছিল সেভিয়ার সার্জিও এসকুদেরোর সামনে। ব্যবধান বাড়ানোরও বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিলেন লেভানদোভস্কি-মুলাররা। তবে কেউই সফল হতে না পারায় ২-১ ব্যবধানে শেষ হয় ম্যাচ।
Comments