অ্যান্টিজেন অনুমোদনে সতর্কতা ও জরুরি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা
কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন টেস্ট নিশ্চিতভাবেই পিসিআর টেস্টের বিকল্প নয়, এমনকি সম্পূরকও বলা যাবে না। যেহেতু ব্যয়বহুল বিশেষায়িত ল্যাবরেটরির প্রয়োজন হয় না এবং অল্প সময়ে এই পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব বিধায় বিভিন্ন দেশ নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দিয়েছে। আমাদের দেশেও এই অ্যান্টিজেন টেস্টের সঠিক প্রয়োগ এবং অপব্যবহার-রোধে এখনি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।
কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন টেস্টের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলো— উপসর্গ থাকার পরও নিশ্চিত ফলাফলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইরাসের উপস্থিতি প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে, পিসিআরের তুলনায় প্রায় সহস্রাধিক গুণ ভাইরাসের উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। তাই উপসর্গের প্রথম দিকে এবং ৭ থেকে ১০ দিন পরে এই অ্যান্টিজেন টেস্ট দ্বারা নিশ্চিত ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনায় অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীই সন্দিহান।
আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের দিল্লির বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ রোগী চিহ্নিতকরণের জন্য এই অ্যান্টিজেন টেস্ট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, অ্যান্টিজেন টেস্টে নেগেটিভ, কিন্তু উপসর্গ বিদ্যমান, সেই ক্ষেত্রে এই ফলাফল পিসিআরের পরীক্ষা দ্বারা নিশ্চিত করার নির্দেশিকা রয়েছে। ফিলিপাইন উপসর্গের সাত দিনের মধ্যে এই অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ নির্ণয়ের অনুমতি প্রদান করেছে। সেখানেও অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ হলে পিসিআর টেস্ট দ্বারা ফলাফল নিশ্চিতকরণের নির্দেশনা আছে। সিডিসি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও অধিকতর পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনার জন্য এই অ্যান্টিজেন টেস্ট ব্যবহারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশিকা তৈরি করেছে।
অ্যান্টিজেন টেস্ট অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে কেবলমাত্র নির্ধারিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অন্যথায় এই অ্যান্টিজেন টেস্টের যত্রতত্র ব্যবহারে নীরব সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি হবে। অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ রোগী অত্যন্ত সংক্রামক। তাই কোভিড-১৯ নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব রোগীদের তথ্য জনস্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অবহিত করতে হবে। অন্যদিকে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও যদি নেগেটিভ হয়, তখন এই রোগীদের মনে ভ্রান্ত-সুরক্ষা ধারণা জন্ম নেবে। তখন এই কোভিড-১৯ রোগীগুলো স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় ফিরে যাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে।
অতএব, এই অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমতি প্রধানের পাশাপাশি এই টেস্টের সঠিক ব্যবহারের নির্দেশিকা তৈরি এখনি প্রয়োজন। যেহেতু এই টেস্ট আমাদের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশিকা (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০) অনুসরণ করা যেতে পারে। এই টেস্টে পজিটিভ অথবা নেগেটিভ রোগীদের জন্য পরবর্তী চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। এই প্রয়োগ-পদ্ধতি (মানসম্মত কার্যপ্রণালিবিধি, এসওপি) দেশের সব নির্ধারিত হাসপাতালে বাধ্যতামূলক অনুসৃত হবে।
আমাদের দেশ অত্যন্ত জনবহুল। ফলে সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তারের ভয়াবহ ঝুঁকি সবসময়ই থেকে যায়। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কার্যকর আইনি সুরক্ষা না থাকায় চিকিৎসা-ব্যবস্থার অনেক অপব্যবহার হয়। ওষুধের অপব্যবহার উল্লেখ্য। তাই অ্যান্টিজেন টেস্টের অপব্যবহার-রোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন-পূর্বক আরও অধিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা প্রয়োজন।
তবে উল্লেখ্য যে, অ্যান্টিবডি নির্ণয়ের জন্যও প্রচলিত বা র্যাপিড টেস্ট কিট এই মুহূর্তে জরুরি। কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপির জন্য অ্যান্টিবডির পরিমাণ নির্ণয় অত্যাবশ্যকীয়। তা ছাড়া, বর্তমান সংক্রমণের হার জানার জন্যও অ্যান্টিবডি টেস্ট অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কিংবা সংক্রমণের হার অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয়পূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধের কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়নে সরকারের তথ্য ভাণ্ডারের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের ফলাফল অপরিহার্য।
খোরশেদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments