ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাঙ্গা-সংঘর্ষ বন্ধের আকুতি এলাকাবাসীর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ও বীরগাঁও ইউনিয়নের অনেক গ্রামের দাঙ্গা-সংঘর্ষ নিরসনে উপজেলা দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অব্যাহত দাঙ্গা-সংঘর্ষের কারণে খুন, হামলা-পাল্টা হামলা ও একের অধিক মামলায় জর্জরিত হওয়াসহ বাসস্থান পুড়ে যাওয়া সেখানকার একাধিক গ্রামের মানুষ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য কমিটির কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের পরামর্শে গতকাল শনিবার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাজিরহাটি গ্রামের গোলাম হোসেন ওরফে আবু মেম্বারের বাড়ির সামনে ও উত্তর-লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পৃথক দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর নবীনগর উপজেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৩ সদস্যের দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর নবাগত কমিটির নেতারা উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে দাঙ্গা নিরসনে তাদের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান।
পৃথক দুটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার দেব।সভা দুটিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, জেলা পরিষদ সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তার হোসেন সিকদার, নবীনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মাহাবুব আলম লিটন।
গত ১২ এপ্রিল লকডাউন উপেক্ষা করে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও থানাকান্দি গ্রামের কাউসার মোল্লার সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। থেমে থেমে চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে মোবারক মিয়া (৪৫) নামে এক রিকশা চালককে প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ি থেকে ধরে এনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে। পরে তারা বিচ্ছিন্ন ‘পা’ হাতে নিয়ে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে আনন্দ মিছিল করে। ওই মিছিল থেকে পায়ের বদলে মাথা কেটে নেওয়ার শ্লোগানও দেওয়া হয়। চারদিন পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোবারক মারা যায়।
ন্যক্কারজনক এ ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ঘটনার প্রভাবে কৃষ্ণনগর ও বীরগাঁও ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের অন্তত ৬০টি বসত ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় অন্তত শতাধিক বাড়িতে। মামলা-পাল্টা মামলায় জড়িয়ে বেশিরভাগ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।
এদিকে, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর মামলার প্রধান আসামি বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমেদ ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Comments