ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছি: মিন্নির বাবা, রায় কার্যকর চান রিফাতের বাবা
আদালতকে প্রভাবিত করার কারণে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর। আজ বুধবার দুপুরে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পরে আদালত প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
মোজাম্মেল হক কিশোর আরও বলেন, ‘মিন্নি কোনো দোষ করেনি। সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রমণকারীদের কবল থেকে তার স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করেছে। আমি এই রায় প্রত্যাখ্যান করছি।’
রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘রায়ে আমি সন্তুষ্ট। অপরাধীদের সঠিক বিচার হয়েছে। আমার একমাত্র ছেলে রিফাত কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। আমি এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাই।’
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন, ‘আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। বিচার সঠিক হয়েছে। এভাবে কাউকে হত্যা করে অপরাধীরা রেহাই পায় না— তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মামলা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি সঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করতে পেরেছি, যে কারণে কাঙ্ক্ষিত রায় এসেছে।’
মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। সেখানে মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো। এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ।’
রায় পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রিফাত শরীফ হত্যায় তার স্ত্রী ও এই মামলার আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন, রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. হাসান ও রেজওয়ান আলী খান হৃদয়। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন এবং মো. মুসাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ সকাল ৯টায় বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের সঙ্গে মিন্নি আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মামলার আট আসামিকে আদালত প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামি মো. মুসা মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১৪ আসামির বিচার বরগুনার শিশু আদালতে চলমান রয়েছে। গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে ভাগ করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। গত ৮ জানুয়ারি থেকে ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় এ মামলায়।
Comments