এক নজরে রিফাত হত্যা মামলার রায় ও প্রতিক্রিয়া
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১০ আসামির রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে। বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান বেলা দেড়টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় একই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর ভূবন চন্দ্র হালদার রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ সময় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৯ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন অপর আসামি মুসা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় ২৪ জনকে আসামি করা হলেও তাদের মধ্যে মিন্নিসহ ১০ আসামির রায় আজ ঘোষণা করা হয়। একই মামলায় বাকি ১৪ আসামি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার বরগুনার শিশু আদালতে চলছে।
রিফাত হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয়, মো. হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
মামলায় বেকসুর খালাসপ্রাপ্তরা হলেন--রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন ও মো. মুসা।
ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন, পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক, সাক্ষ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
এটি একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারি রায় উল্লেখ করে তিনি বলেন আমরা এ রায়ে খুশি। অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না এবং অপরাধী যেই হোক শাস্তি তাকে পেতে হবে এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো।
অপর সরকারী কৌশলী মজিবুল হক কিসুলু বলেন, আদালত মিন্নির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছেন, রিফাত হত্যার সাথে মিন্নির সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি অন্যান্য আসামিদের সাথে গোপনে পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন।
সে অনুযায়ী নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, আর এ কারণেই মিন্নিকে মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে, জানান ওই কৌশলী।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। এজাহারের প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২ জুলাই নিহত হন। ওই মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে ৬১৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে রিফাত ফরাজীকে।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। গত ৮ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এই মামলায়।
রিফাতের পরিবারের প্রতিক্রিয়া
মামলার বাদী রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং আদালতের এ রায়ে আমি এবং আমার পরিবার খুশি।
রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
মিন্নির পরিবারের প্রতিক্রিয়া
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। বিচার প্রভাবিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন মিন্নি নিরপরাধ।
তিনি বলেন, নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মিন্নি আক্রমণকারীদের থেকে রিফাতকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তবু তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হলো। আমরা কোনভাবেই এ রায় মেনে নিতে পারছি না।
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে মিন্নির উপস্থিতিতে কলেজের শহীদ মিনারে হত্যার পরিকল্পনার যে মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে মিন্নি ছিলেন না। আহত রিফাত শরীফকে মিন্নি হাসপাতালে নিয়ে গেছে। রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মিন্নির রক্তমাখা জামা-কাপড় পুলিশ নিলেও আদালতে তা উপস্থাপন করা হয়নি।
আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব সেখানে মিন্নি অবশ্যই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন, বলেন তিনি।
রিফাত হত্যা
২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে স্ত্রীকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজে যান রিফাত। সেখানে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করে একদল সন্ত্রাসী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নয়ন বন্ড নামে এক যুবকের নেতৃত্বে ৪-৫ জন সন্ত্রাসী রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে রিফাত মারা যান। মৃত্যুর দুই মাস আগে রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়।
Comments