ব্যাংকিং খাতের এই অর্জন মুনাফা না মরীচিকা

ব্যবসায়িক ধ্বস, করোনাভাইরাস মহামারি এবং খেলাপি ঋণের হিসাবের মাঝেও ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকিং খাতে নিট মুনাফা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

ব্যবসায়িক ধ্বস, করোনাভাইরাস মহামারি এবং খেলাপি ঋণের হিসাবের মাঝেও ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকিং খাতে নিট মুনাফা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে নিট মুনাফার এই উল্লম্ফন আসলে মরীচিকা। তাদের মতে ব্যাংকের লাভ বেড়েছে কেবল কাগজে।

ঋণগ্রহীতারা যাতে খেলাপি না হন, এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছর ঋণের কিস্তি না দেওয়ার সুবিধা দিয়েছে।

চলমান অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি কিস্তি স্থগিত সুবিধার কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাব পরেছে।

কিন্তু ব্যাংক আদায় করতে না পারা ঋণের সুদ তাদের আয়ের খাতায় যোগ করছে। ফলে কৃত্রিমভাবে বেড়েছে তাদের মুনাফা।

কিন্তু এই ধরনের সুদ আবার আয় খাত থেকে ব্যাংকগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হয়, যদি সংশ্লিষ্ট ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কৃত্রিম মুনাফা বাড়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।’

অনর্জিত সুদ পুরোটাই আয় খাতে নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করা হবে শিগগির। এর জের ধরে চলতি বছরে শেষের দিকে নিট মুনাফা কমবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত, তা না হলে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা সাধারণ মানুষের আমানত থেকে লভ্যাংশ উপভোগ করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের অনেক পরিচালকই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে জানা যায়। তাই, তারা কৃত্রিম মুনাফার মাধ্যমে আরও বেশি লভ্যাংশ উপভোগ করার চেষ্টা করবেন। তাদের এ ধরনের প্রবৃত্তির ওপর কঠোরভাবে বাধা দেওয়া উচিত।’

ফেরত পাওয়া ঋণের টাকার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আয়ের হিসাব করতে হবে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের ৮৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা পুনরুদ্ধার করেছে ব্যাংকগুলো।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ঋণের কিস্তি স্থগিত সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণ প্রথমার্ধে খুব বেশি বাড়েনি।

তিনি বলেন, ‘এটি ব্যাংকগুলোতে নিট মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করেছে। কারণ, তাদের কে খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি কম দেখাতে হয়েছে।’

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় যা ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ কম।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান নিট মুনাফা ব্যাংকিং খাতের জন্য কোনো বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে না, যদি শেয়ারহোল্ডারদের অবাধে লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

তিনি জানান, লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও নির্দেশনা আসা উচিত।

বেসরকারি কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা প্রথম ছয় মাসে হয়েছে তিন হাজার ২৯২ কোটি টাকা। যা গত বছর ছিল তিন হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।

বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর মুনাফা হয়েছে এক হাজার ৯১ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিট লোকসান পরিমাণ ৭৬ কোটি পাঁচ লাখ। গত বছর একই সময়ে এই লোকসানের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা।

তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে তাদের যৌথ নিট লোকসান দ্বিগুণ হয়েছে বলে দেখিয়েছে। গত বছর লোকসানের পরিমাণ ৯৫৯ কোটি টাকা হলেও এ বছর সেই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago