শান্তি আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে পাল্টাপাল্টি গুলি চালানোর অভিযোগ করেছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। চলমান সংঘাত নিরসনে আলোচনার জন্য রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে দেশ দুটি।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ছবি: রয়টার্স

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে পাল্টাপাল্টি গুলি চালানোর অভিযোগ করেছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। চলমান সংঘাত নিরসনে আলোচনার জন্য রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে দেশ দুটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ আজ বৃহস্পতিবারেও অব্যাহত রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যকার সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে।

রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ এই সংকট নিরসনে জরুরি আলোচনার আহ্বান জানালেও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ শান্তি আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পশিনিয়ানও একই টেলিভিশনকে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলাকালীন আলোচনা সম্ভব না বলে জানান।

আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ দিনের সামরিক সখ্যতা রয়েছে। অন্যদিকে আজারবাইজানে তুর্কি জাতিসত্তার অধিবাসী থাকায় আঙ্কারার সমর্থন পাচ্ছে দেশটি।

গত রোববার আজারবাইজান এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত আর্মেনীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর প্রতিবেশী শক্তিশালী দুই রাষ্ট্র রাশিয়া ও তুরস্ক মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসতে পারে এবং অন্যান্য ক্ষমতাধর দেশগুলোও এতে জড়িয়ে পরতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ১৫ সদস্য দেশ এই সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ জানায়। বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাত্ক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মধ্যেই আর্মেনিয়া জানায় তাদের একটি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে তুরস্ক।

গত মঙ্গলবার আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আর্মেনিয়ার আকাশসীমায় তুর্কি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান আর্মেনিয়ার একটি এসইউ-২৫ কে ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনায় পাইলট নিহত হয়েছেন।

তবে, এ ঘটনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তুরস্ক এই দাবিকে পুরোপুরি অসত্য বলে উল্লেখ করেছে। আজারবাইজানও এ দাবিকে অস্বীকার করেছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পশিনিয়ান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আজারবাইজানদের আগ্রাসন ও তুরস্কের ক্রিয়াকলাপের সমালোচনা করা এবং তুরস্ককে এই অঞ্চলের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে চাপ দেওয়া। এই অঞ্চলে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলবে ও প্রসারিত করবে।’

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বিমান ভূপতিত করার ঘটনাটি মিথ্যা দাবি করে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘তুরস্ক কখনোই এই সংঘাতে জড়ায়নি। কোনোভাবেই এতে অংশ নেয়নি এবং এর কোনো প্রয়োজনও নেই।’

ক্রেমলিন জানায়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সংকট শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পশিনিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তিনি।

তবে, দুই দেশই রাশিয়ার মধ্যস্থতার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।

কয়েক দশকের বিরোধে ১৯৮০’র দশকের শেষদিকে কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে ওই সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।

এখনও পর্যন্ত কোনো দেশ কারাবাখের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি, এমনকি আর্মেনিয়াও নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে এখনো আজারবাইজানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago