আসকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন প্রকাশ
মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে এ সময়কালের মধ্যে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা, খাগড়াছড়িতে চাকমা নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতন, সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী কর্তৃক স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে আসকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন ও হত্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন, করোনাকালে দেশে এবং বিদেশে অভিবাসী শ্রমিকদের আটক ও নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত ও ১৫ জন আহত হওয়াসহ বিভিন্ন আলোচিত ঘটনার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে বলা হয়, এ বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময়কালে নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলা, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, নজরদারি ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিচার বহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু
গত নয় মাসে প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ২১৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’/বন্দুক যুদ্ধ/গুলিবিনিময়/এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন ১৮৫ জন এবং বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন ২৭ জন।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
এই নয় মাসে দেশের কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৫৮ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৪ জন এবং হাজতি ৩৪ জন।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ/আটক
গত নয় মাসে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ/গুমের (পরিবারের দাবি অনুযায়ী) শিকার হয়েছেন চার জন। এরমধ্যে পরবর্তী সময়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং এখনও নিখোঁজ একজন।
ধর্ষণ ও হত্যা
এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২০৮ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন।
যৌন হয়রানি ও সহিংসতা
গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে ১২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন জন নারী এবং নয় জন পুরুষ নিহত হয়েছেন।
পারিবারিক নির্যাতন
গত নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ জন এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ জন।
যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন
যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ জন নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৭৩ জন, যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। এছাড়া স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ১২ জন।
গৃহকর্মী নির্যাতন
এই নয় মাসে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার জন এবং আত্মহত্যা করেছেন দুই জন।
এসিড নিক্ষেপ
এই সময়কালে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী।
শিশু নির্যাতন ও হত্যা
গত নয় মাসের এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়কালে এক হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয় এবং হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন
এ সময়ের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৭টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪২ জন। এছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি বসতঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি
গত নয় মাসে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ২০৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে বিজয় টিভির ধামরাই প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে।
সীমান্ত হত্যা
এ সময়ে ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ৩২ জন এবং শারীরিক নির্যাতনে ছয় জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১৮ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ২০ জন।
গণপিটুনি
এ সময়কালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন মোট ৩০ জন।
Comments