‘যা আয় হয় তা দিয়ে চাল কেনার সামর্থ্যও হয় না’
বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত কাজের সঙ্গে জড়িত মনিদাস সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন-জীবিকায় মন্দ প্রভাব ফেলেছে করোনা মহামারি। প্রায় ৯০ শতাংশ আয় কমে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে তাদের জীবিকা। অনেকের সংসার চলছে ঋণ করে। উপার্জন না থাকায় শঙ্কায় এসব পরিবার।
লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় শতাধিক মনিদাস পরিবারের বাস। এসব পরিবার বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এ সম্প্রদায়ের লোকজন সংগীতের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, তবলা, কংগো তৈরি ও মেরামত করেন। সংগীতের চর্চা নিয়মিত থাকলে এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের বাজার থাকে ভালো।
লালমনিরহাট পৌরসভার নবাবেরহাট এলাকার বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ করেন সুনীল চন্দ্র মনিদাস (৪৪)। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে গেলে ছয় মাস ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কোনো আয় নেই। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আসে মৃদঙ্গ তৈরি ও মেরামতের জন্য। যা আয় হয় তা দিয়ে চাল কেনার সামর্থ্যও হয় না।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর এলাকায় বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত কাজের সাথে জড়িত মানিক চন্দ্র মনিদাস (৪৬) দ্য ডেইলী স্টারকে বলেন, পৈতৃকসুত্রে এ পেশার সাথে জড়িত। অন্য কোন কাজ জানি না। করোনা মহামারী আমাদের আয়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সংস্কৃতি অনুষ্ঠান না হলে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারও হয় না, তাই বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের প্রয়োজনও হয় না।
তিনি বলেন, কোনো আয়-উপার্জন নেই, জানি না এভাবে আর কতদিন চলবে। এখন ঋণ করে সংসার চালাচ্ছি।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা এলাকায় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ করেন বরুন চন্দ্র মনিদাস (৫০)। তিনি বলেন, করোনা মহামারির আগে তিনি প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ টাকা আয় করতেন আর এখন আয় আসে মাত্র ১২০-১৫০ টাকা যা দিয়ে সংসার চলে না।
‘করোনা পরিস্থিতি আমাদের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। বাদ্যযন্ত্রের কাজ ছাড়া অন্যকাজ জানি না তাই এ পেশাও ছাড়তে পারছি না,’ বলেন তিনি।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট এলাকার রবি চন্দ্র মনিদাস (৬৫) বলেন, এ অঞ্চলের তাদের সম্প্রদায়ের মানুষজন কম হলেও সবাই বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত কাজের সাথে সম্পৃক্ত। দুই জেলার মনিদাস সম্প্রদায়ের সব পরিবারের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। কারও অবস্থাই ভালো নয়। ‘করোনা মহামারিতে আমাদের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমাদের কষ্টও কমবে না,’ বলেন তিনি।
Comments