প্রাচীন পুরাকীর্তির নিদর্শন ‘নিদাড়িয়া মসজিদ’
উত্তরের সীমান্তবর্তী কৃষি নির্ভরশীল লালমনিরহাট জেলার অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি ‘নিদাড়িয়া মসজিদ’। প্রাচীন পুরাকীর্তির নিদর্শন মসজিদটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিসামত নগরবন্দ গ্রামে অবস্থিত।
এই মসজিদের ১০ একর ৫৬ শতাংশ জমি থাকলেও আট একর জমি স্থানীয় সাতটি পরিবারের জোরপূর্বক দখলে রয়েছে। মসজিদের জমি উদ্ধারে মামলা চলছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু, আজও উদ্ধার হয়নি এসব সম্পত্তি। মসজিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দুই একর ৫৬ শতাংশ জমি। যার মধ্যে এক একর ৫৬ শতাংশ জমিতে রয়েছে মসজিদটি ও ঈদগাহ মাঠ। বাকি এক একর জমি আবাদি। চাষাবাদ করে যা আয় হয়, তা চলে যায় মামলা পরিচালনায়।
তবে, মসজিদ কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন আশার বাণী শুনিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মসজিদের জমি দখলকারী আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা মসজিদের জমি ফেরত দিতে স্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে, তাদেরকে বাৎসরিক লিজ দেওয়ার শর্তে।’
‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের ডিক্রি পেতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে, আগামী মাসে আদালতের ডিক্রি পেয়ে যাব’, বলেন তিনি।
সভাপতি আরও বলেন, ‘গেল ছয় যুগ ধরে মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধার করতে মসজিদ কমিটি আদালতে মামলা চালিয়ে আসছে। কমিটি পরিবর্তন হয়। কিন্তু, মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধার হয় না। আমার আমলে মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধারের ফয়সালা করেছি।
বিগত এক যুগ ধরে মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আদালতের ডিক্রি পাওয়ার পরই আমরা বৈঠক করে মসজিদের সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর মাঝে বাৎসরিক লিজ হিসেবে প্রদান করব।’
মসজিদের জমি অবৈধভাবে দখলে রাখা পরিবারগুলোর মধ্যে একটি পরিবারের সদস্য নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, মসজিদের জমি তাদেরকে বাৎসরিক লিজ দেওয়ার শর্তে তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। ‘দীর্ঘকাল ধরে মামলা মোকদ্দমায় আমাদের পূর্ব পুরুষরা নাজেহাল হয়েছিল। আমরাও একইভাবে নাজেহাল হচ্ছিলাম। প্রাচীন পুরাকীর্তির নিদর্শন নিদাড়িয়া মসজিদের উন্নয়নে আমরাও অংশগ্রহণ করব।’
ওই মসজিদের ঈমাম ফজলুল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নির্মাণ শৈলির দিক থেকেও এটি অনেক উচুমানের। ভারী ভারী দেয়াল, উচুঁ গম্বুজ, কক্ষের ভেতরের সুন্দর পরিবেশ মসজিদটিকে আলাদা করে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিদাড়িয়া মসজিদটি একটি প্রাচীন এক কক্ষের মসজিদ। এর অভ্যন্তরে একটি মাত্র কক্ষ আছে। উপরিভাগে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। চার কোণায় চারটি পিলার আছে। মসজিদের বাম পাশে একটি কবর আছে। কবরটি সর্ম্পকে সঠিক ধারণা পাওয়া না গেলেও অনেকেই মনে করেন কবরটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সুবেদার মনসুর খাঁর।’
মসজিদের মুয়াজ্জিন আনছার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১১৭৬ হিজরি সনে সুবেদার মনসুর খাঁ কর্তৃক মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। কথিত আছে মসজিদটির নির্মাতা সুবেদার মনসুর খাঁর মুখে দাড়ি ছিল না। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে, তার মুখে দাড়ি হলে তিনি একটি মসজিদ তৈরি করে দেবেন। পরে দাড়ি হলে তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মসজিদ নির্মাণ করে দেন। তাই মসজিদটি “নিদাড়িয়া মসজিদ” নামে পরিচিত হয়।’
‘নিদাড়িয়া মসজিদটি প্রাচীন পুরাকীর্তি হওয়ায় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও জাদুঘর এটিকে প্রাচীন পুরাকীর্তি ঘোষণা করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। মসজিদের সম্পত্তি নিয়ে মামলা ও এটি প্রাচীন পুরাকীর্তির নিদর্শন হওয়ায় মসজিদটির উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসেনি’, বলেন তিনি।
Comments