বন্যা ও করোনার মধ্যেও ধরলার কাশবনে দর্শনার্থীরা

মোবাইলে সেলফি তুলতে ব্যস্ত কয়েকজন। ছবি: স্টার

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে বিনোদন শূন্য হয়ে পড়েছেন মানুষ। বিনোদন কেন্দ্র এবং দর্শনীয় স্থানগুলো বন্ধ থাকায় চাইলেও কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সেই সঙ্গে রয়ে গেছে বন্যার প্রভাব। তবে, এই শরৎকালে কাশবনগুলোই হয়ে উঠেছে মানুষের প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র। নদী চরে প্রস্ফুটিত কাশফুলের স্পর্শ নিতে তাই ধরলামুখি বিনোদন প্রিয় মানুষ।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর চরে গজিয়ে ওঠা কাশবন দেখতে ভিড় বাড়ছে। শরৎকালে ধরলা নদীর সবগুলো চরেই দেখা যায় কাশফুল। তবে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চর সোনাইগাজী ও চর যতীন্দ্র নারায়নে রয়েছে সবচেয়ে বড় কাশবন। প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে এ কাশবনটি শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাশেই।

যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় দর্শনার্থীরা এখানেই বেশি ভিড় জমান, নৌকায় চড়ে কাশবন ঘুরে দেখন। কাশফুল হাতে নিয়ে চিত্ত বিনোদনের মোহে বিমোহিত হয়ে প্রকৃতির প্রেমে হারিয়ে যান দর্শনার্থীরা। মোবাইলে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা শেয়ার করতে ব্যস্ত অনেকেই। এ কাশবনটি এখন পরিণত হয়েছে প্রকৃতি প্রেমী মানুষদের বিনোদন কেন্দ্রে।

কাশবনের মাঝে এক শিশুর অনাবিল হাসি। ছবি: স্টার

চর সোনাইগাজীর কৃষক মফিজুল ইসলাম (৫৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ চরে প্রতি বছরই কাশফুল জন্মায়। কিন্তু এ বছর অনেক বেশি হয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে কাশবন। কাশফুল চাষ করতে হয় না, এমনিতেই হয়। বর্ষা শেষে কাশগুলো কেটে বিক্রি করে চরের কৃষক আয় করেন। এর জন্য কোনো খরচ করতে হয় না।’

চর যতীন্দ্র নারায়নের কৃষক আফজাল মণ্ডল (৬০) বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্রাম ও শহর থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন কাশবন দেখার জন্য। তারা দলে দলে নৌকা ভাড়া করে কাশবন ঘুরে দেখেন। ইতোপূর্বে কাশবন দেখার জন্য এত দর্শনার্থীর ভিড় দেখিনি।’

শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পাড়ে নৌকার মাঝি জোবেদ আলী (৪০) বলেন, ‘কাশবন দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আয় বেড়েছে। এক ঘণ্টা নৌকায় চড়ে কাশবন দেখার জন্য ভাড়া নেই আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা। বেশ কয়েকজন একসঙ্গে নৌকা ভাড়া করে কাশবনে ঘুরতে যান। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ আসেন চরের কাশবন দেখতে।’

লালমনিরহাট শহর থেকে কাশবন দেখতে আসা দর্শনার্থী মৌমিতা ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের চিত্ত বিনোদন কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু চরে বিশাল কাশবনটি আমাদের আর আটকে রাখতে পারেনি ঘরে। নৌকায় করে কাশবনটি দেখতে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।’

আরেক দর্শনার্থী প্রীতি ইসলাম বলেন, ‘নৌকায় চড়ে নদীর বুকে মুক্ত বাতাসও পাওয়া গেলো, আবার কাশবন ঘুরে দেখে নির্মল আনন্দও উপভোগ করা হলো। কোভিড-১৯ মহামারির ধকলে মনটা জড়তায় ভরে গিয়েছিল। কিন্তু চরে কাশবন দেখতে এসে সেই জড়তা ভুলে গেছি।’

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী শহর থেকে আসা দর্শনার্থী সুমন কুমার পাল বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। নৌকায় চড়ে কাশবন দেখতে গিয়েছিলাম। বাচ্চারা খুবই খুশি। শুধু শরৎকাল নয়, সারা বছরই যদি কাশবন থাকতো, তাহলে প্রকৃতির এই বিনোদন উপভোগ করা যেতো।’

Comments

The Daily Star  | English

Iran says not seeking nuclear weapons but will assert 'legitimate rights'

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago