‘জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কাউন্সিলররা’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী হয়েও মাত্র ১ ভোট পেয়েছেন শফিকুল ইসলাম মানিক। অথচ কাউন্সিলরদের আশ্বাস পেয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটে তার ভরাডুবি হয়েছে। বিপরীতে বড় ব্যবধানে জিতে চতুর্থবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিনই। এত শুধু তার সঙ্গেই নয়, জনগণের সঙ্গেও কাউন্সিলররা প্রতারণা করেছেন বলে মনে করেন মানিক।
শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২০ সালের বাফুফে নির্বাচন। ১৩৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩৫ জন তাদের ভোট প্রদান করেছেন। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল জানা যায়নি। বিশেষ সূত্রে অনানুষ্ঠানিক ভাবে জানা গেছে, সালাউদ্দিন ভোট পেয়েছেন ৯৪টি। বাদল রায় পেয়েছেন ৪০টি। আর মানিক পেয়েছেন মাত্র ১ ভোট।
ফল জানার পরই ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক ফুটবলার মানিক। বিশেষ করে, কাউন্সিলরদের এক হাত নিয়েছেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারের কাছে তিনি বলেন, ‘এই ফল অনাকাঙ্ক্ষিত। সম্মানিত কাউন্সিলররা ভোটিংয়ের মাধ্যমে যে ফল দিয়েছেন, আমি মনে করি, তাদের দায়বদ্ধতা আগেও ছিল না, ফুটবলের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা (এখনও) নেই। জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কাউন্সিলররা।’
নির্বাচনে জিতলেও অনেকদিন থেকেই সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবচ্ছেদ হয়ে আসছিল সালাউদ্দিনের বিগত বছরগুলোর কর্মকাণ্ডের। মূলত তার কাছে যে প্রত্যাশা ছিল ফুটবল অনুরাগীদের, তা পূরণ হয়নি। তাকে নিয়ে তাই সমালোচনায় মাতে ফুটবলভক্তরা। এমনকি ভোট চলাকালীনও হোটেলের বাইরে একদল ফুটবল সমর্থক তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। তবে ভোটে এসবের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
তাই কাউন্সিলরদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মানিক, ‘সালাউদ্দিন ভাইয়ের বিপক্ষে জনগণের রায়। তাই বলব, আশার বিপক্ষে একটি রায় হয়েছে। জনগণ চাচ্ছে পরিবর্তন, কিন্তু কাউন্সিলররা উপর থেকে বলেছে যে, তারা পরিবর্তনে বিশ্বাসী, কিন্তু অন্তর দিয়ে তারা যে পরিবর্তনে বিশ্বাসী নয়, তারই বহিঃপ্রকাশ এই ফল। ফুটবল উন্নয়নে কী কাজ করবে তা কাউন্সিলরদের দায়িত্ব। আগামী চার বছর ফুটবলের জন্য তাদের দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি থাকবে। ফেডারেশনের থেকে কাউন্সিলরদের দায়বদ্ধতা বেশি।’
ভিন্ন কিছুর আলামতও খুঁজে পাচ্ছেন এক সময়ের জনপ্রিয় এ ফুটবলার, ‘সবার কাছ থেকে যে আশ্বাস পেয়েছি, আশানুরূপ ফল হয়নি অবশ্যই। আমি মনে করি, এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, গতকাল রাতে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। যেমন- বাদল রায়ের প্রত্যাবর্তন। বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে কাউন্সিলরদেরকে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এই ভোটগুলো গেল কোথায়? তারা নিশ্চিত করেছিল আমাকে। কিন্তু আমি পয়সা দেইনি বলে (ভোট দেয়নি আমাকে)? তাই আমার মতে, এই ফল প্রত্যাশিত না।’
তাছাড়া, ভোট গণনার স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ করেন মানিক। ভোট গণনার সময় তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে আগেই জানান গণমাধ্যমে, ‘ভোট গণনার সময় আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় ভেতরে সালাউদ্দিন ভাই উপস্থিত ছিলেন। গণনার সময় আমার পক্ষের এক জনের উপস্থিত থাকা উচিত। না হলে কে দেখবে গণনা ঠিক মতো হচ্ছে কী না? আমার যেহেতু কোনো প্রতিনিধি নেই, তাই আমি ওখানে বসেছিলাম। কিন্তু আমাকে বলা হলো, আপনি আসুন, আপনি এখানে থাকতে পারবেন না। এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে।’
মানিক নির্বাচনে প্রার্থী হলেও কাউন্সিলর নন। তাই নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীর পক্ষে কেউ ভোট গণনা কক্ষে থাকতে চাইলে আগে থেকে তা আবেদনের মাধ্যমে জানাতে হবে। মানিক তা করেননি। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও তাকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
Comments