নোয়াখালীতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৪

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে এক নারীকে (৩৭) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রধান আসামি চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Arrest.jpg
গ্রেপ্তারকৃত আসামি দেলোয়ার, বাদল, আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহ। ছবি: স্টার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে এক নারীকে (৩৭) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রধান আসামি চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গতকাল রাত পৌনে ১২টায় বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন। একটি মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয় জনকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার চার জন হলেন— বেগমগঞ্জ একলাশপুর এলাকার রহমত উল্যার ছেলে ও মামলার প্রধান আসামি বাদল (২২), দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, রহমত উল্লাহ ও আবদুর রহিম (২২)।

এদের মধ্যে আজ সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে বাদলকে ঢাকা থেকে ও দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম। তিনি বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করার সময় একটি পরিবহন থেকে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে প্রধান আসামি বাদলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে বেগমগঞ্জ থানায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’

আর গতকাল বেগমগঞ্জ থেকে আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাজাহান শেখ ও বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বড় খালপাড় এলাকায় ঘরে ঢুকে ওই নারীকে অপবাদ দিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে একদল তরুণ। সেসময় ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন তারা। ঘটনার এক মাস দুই দিন পর গতকাল দুপুরে ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে ঘরে ঢুকে ওই নারীর স্বামীকে অন্য কক্ষে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে নির্যাতন করেন। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্রও ধারণ করেন। গত এক মাস ধরে তারা এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একলাশপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর ও জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি গতকাল জানান, ওই নারীর বিয়ে হয় বছর তিনেক আগে। স্বামী তাকে রেখে অন্যত্র দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে স্বামীর কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী ওই নারীর ঘরে ঢুকেন। স্থানীয় মাদক চোরাকারবারি বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার এ ঘটনা দেখে তার লোকজন নিয়ে রাত ১০টার দিকে ওই ঘরে প্রবেশ করে নারীকে অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তাকে পিটিয়ে বিবস্ত্র করে তার ভিডিও ধারণ করেন।

ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

গতকাল স্থানীয় ইউনিয়ন পিরিষদের চেয়ারম্যানপ্রার্থী সাইদুর রহমান দিপু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাদক চোরাকারবারি দেলোয়ার বাহিনী এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তিনি নির্যাতনকারী দেলোয়ার ও তার বাহিনীর লোকজনের গ্রেপ্তার দাবি করে বলেন, ‘কোনো সভ্যসমাজে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না।’

স্থানীয় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী আমার কাছে এসেছিলেন। তবে কারা তাকে নির্যাতন করেছেন, তা তিনি বলেননি। ঘটনার পর থেকে তিনি ও তার পরিবার বাড়িতে বসবাস করে না।’

আরও পড়ুন:

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে নির্যাতন ও ভিডিওধারণ, আটক ১

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago