বছর শেষ বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ানোর শঙ্কা গবেষকদের

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বে নয় মাসে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, পরবর্তী তিন মাসে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে ও ফ্লু মৌসুমে উত্তর গোলার্ধে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। ফাইল ছবি এএফপি

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বে নয় মাসে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, পরবর্তী তিন মাসে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতকালে ও ফ্লু মৌসুমে উত্তর গোলার্ধে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় বাড়তে পারে বলে সর্তক করেছেন স্বাস্থ্য গবেষকরা।

সোমবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা সরকারি গণনার প্রায় ২০ গুণ বেশি। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। 

ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, বছরের শেষে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের করোনায় মৃত্যু হতে পারে।

ডব্লিউএইচএওর কর্মকর্তা জেনেট হ্যাচার রবার্টস জানান, ভাইরাসটি অনেক সংক্রামক। মহামারির সাধারণ বিস্তারের চেয়ে এটি দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ব্যবস্থাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন আমরা সমন্বিতভাবে তা করছি না।’ মানুষ এখন “মহামারিজনিত ক্লান্তি” অনুভব করছে, স্বাস্থ্য পরামর্শ উপেক্ষা করছে। মহামারিকে অস্বীকার করার অর্থ হলো এটির বিস্তারকে বাড়িয়ে তোলা।’

নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক মাইকেল বেকার জানান, একে প্রতিরোধে নানা ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে, এর গঠন এখন কয়েকটি স্তরে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে শনাক্তের সংখ্যা কম। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে করোনা পরীক্ষা সুবিধা কম থাকায় প্রকৃত সংখ্যাটি জানাও বেশ কঠিন। অন্যদিকে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বেশিরভাগ দেশে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়ার পরে সংক্রমণ বেড়েছে।’

উত্তর গোলার্ধে শীত ও ফ্লু মৌসুমে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ।

বেকার জানান, শীতকালীন পরিস্থিতিতে শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণের হার বাড়ে। একইভাবে, করোনার হারও বাড়বে। কারণ মানুষ শীতকালে ঘরের ভেতরেই বেশি সময় কাটায়, জনাকীর্ণ জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। করোনাভাইরাস ঠান্ডা আবহাওয়ায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। আবার, ঠান্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে মানুষের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

তিনি বলেন, ‘উত্তর গোলার্ধে শীতকালে কোভিড -১৯ এর বিস্তার বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

ডেলওয়্যার স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনা প্যাটারসন বলেন, 'করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। পরীক্ষা, চিকিত্সা, সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করা, কোয়ারেন্টিন করা, আইসোলেশন- এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এটা স্পষ্ট যে, সরকার বা নাগরিকরা যদি মহামারি ঠেকাতে সুরক্ষাবিধি না মানেন, তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে।’

বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ব্রাজিলে করোনার সংক্রমণ এখনও স্থিতিশীল হয়নি। সেকেন্ড ওয়েভের ক্ষেত্রে সংক্রমণ আরও বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

হ্যাচার রবার্টসের মতে, ফ্লু মৌসুমে করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা জটিল হবে। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কোভিড -১৯ এর উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন।

তিনি বলেন, ‘করোনার পরীক্ষার চাহিদা বাড়বে। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। আবার অনেকেই ফ্লু নাকি করোনা এই দ্বন্দ্বের কারণে করোনা পরীক্ষা করতে চাইবে না।’

প্যাটারসন জানান, আমি আশা করি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে মানুষ এই ভাইরাস সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হবে।

প্যাটারসনের মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মাস্ক, থার্মোমিটার ও জীবাণুনাশক বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ফলে, ভাইরাসটির তীব্রতা নিয়ে সন্দেহ ছিল এমন অনেক মানুষ এখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও বিধিনিষেধের কারণে দেশজুড়ে একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটছে। এর মাধ্যমেই করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago