নদী সব কেড়ে নিয়েছে ফুলোমালার

ফুলোমালা বর্মণের বয়স ৮৫ বছর পেরিয়েছে। একসময় সবকিছুই ছিলো ফুলোমালার। কিন্তু, এখন আর কিছুই নেই, থাকেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের উপর ছোট একটি কুঁড়েঘরে। নদী সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে তার। কিন্তু, তিনি ছাড়েননি নদীরপাড়।
নির্বাক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন ফুলোমালা বর্মণ। ছবি: এস দিলীপ রায়

ফুলোমালা বর্মণের বয়স ৮৫ বছর পেরিয়েছে। একসময় সবকিছুই ছিলো ফুলোমালার। কিন্তু, এখন আর কিছুই নেই, থাকেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের উপর ছোট একটি কুঁড়েঘরে। নদী সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে তার। কিন্তু, তিনি ছাড়েননি নদীরপাড়।

স্বাধীনতার এক বছর পর স্বামী বাঞ্চারাম বর্মণকে হারিয়েছেন তিনি। একমাত্র মেয়ে কান্দেরী রানীর বিয়ে দিয়েছেন স্বাধীনতার দুই বছর আগে। স্বামীকে হারিয়েছেন নদীরপাড়ে, তাই স্বামীর স্মৃতিকে আগলে শেষ নিঃশ্বাস অবধি নদীপাড়ে থাকবেন ফুলোমালা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদীপাড়ের গ্রাম ইটাপোতার ফুলোমালা বর্মণের জীবনগল্প এমনই কষ্টের। নদীপাড়ে এমন অসংখ্য ফুলোমালার জীবনগল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

ফুলোমালা বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর আগে আমার সংসার ছিলো সুখের। গাছ-গাছালি দিয়ে সজ্জিত একটি মনোরম বসতভটা ছিলো, গোয়াল ঘর ছিলো গরুতে ভর্তি। আর ছিলো ১৬ বিঘা আবাদি জমি। এখন ভূমিহীন নিঃস্ব। সবকিছুই চলে গেছে ধরলা নদীর উদরে। জীবন বেঁচে আছে সরকারের দেওয়া ভিজিডি চালের ওপর। পরনের কাপড়টিও ছেড়া।’

তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর বাবার বাড়ির মানুষ ধরলাপাড় ছেড়ে তাদের কাছে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু, তিনি যাননি। এখনো ধরলাপাড় ছেড়ে তাদের সঙ্গে থাকতে বলছেন। তবে, ধরলাপড় ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না আর যাবেনও না। ধরলা নদীকে ঘিরে রয়েছে তার সকল স্মৃতি। যখন খারাপ লাগে তখনি ছুটে আসেন ধরলাপাড়ে।

বুধবার দুপুরে ধরলাপাড়ে গেলে দেখা যায় ফুলোমালা লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ধরলা নদীর তীরে।

নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন নদীর দিকে। নদীর যেখানে তার বসতভিটা ও আবাদি জমি সেখানেই নির্বাক তাকিয়ে ছিলেন তিনি। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একসময় কেঁদে ফেলেন তিনি।

‘এ্যাটে কোনা মোর স্বামীর ভিটা। মোর স্বামী এ্যাটে কোনাশুইয়া আছে। মুই ক্যামন করি এইল্যা ছাড়ি যাং। যতদিন দেহাত পরানটা আছে ততদিন মুই নদীরপাড়োত থাকিম,’ বলেন ফুলোমালা বর্মনী।

তিনি আরও বলেন, ‘মোর জীবনটা সুখোত আছিল। স্বামী মরি যাওয়ার থাকি দুখখোত পড়ি যাং। জীবনে কয়বারযে বাড়ি ভাংছোং তার কোন ঠায়ঠিকানা নাই।’

সকালের নাস্তা জোটে না ফুলোমালার ভাগ্যে। দুপুরে নিজে একমুঠো রান্না করে সেই খাবারে চলে রাতের খাবার। মাঝে মাঝে মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু টাকা আসে। গ্রাম প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্পগুজব করে দিন কাটে তার। বয়স বেশি হলেও লাঠিতে ভর দিয়ে সারা গ্রাম জুড়ে বেড়ানোও ফুলোমালার একটি পুরনো অভ্যাস।

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ধরলাপাড়ে ফুলোমালা বর্মণীর মতো অনেক মানুষ নদী ভাঙনে ভূমিহীন ও নিঃস্ব হয়ে সরকারি রাস্তা ও ঘাসের জমির উপর কুঁড়েঘর বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সরকারি বিভিন্ন সহায়তার মধ্যে আনা হয়েছে। সরকারিভাবে যখন কোনো ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয় তখন তাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’

Comments

The Daily Star  | English

‘Selling child for treatment tragic violation of rights’

NHRC takes suo motu cognizance of TDS report, vows to ensure rights of the family, asks Dinajpur DC to probe and submit report by Oct 15

35m ago