যারা ফেল করত তারাও পাবে এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট
করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ওপর মূল্যায়ন করে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হবে। ফলে, যেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিলে অনুত্তীর্ণ হতো, তারাও এ বছর সার্টিফিকেট পাবে।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, গত পাঁচ বছরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পাস করতে পারেনি। তবে, এই বছর সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শতভাগ পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এই ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী, যাদের পরীক্ষায় ফেল করার সম্ভাবনা ছিল, তারাও এখন সার্টিফিকেট পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সিদ্দিকুর বলেন, ‘এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য না। তারা যোগ্যতা অর্জন না করেই সার্টিফিকেট পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও তারা কিছুটা সুযোগ-সুবিধা পাবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এসএসসি পরীক্ষায় কম জিপিএ পেয়েছে, কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে তারাও বঞ্চিত হবে।
সরকার যদি কাউকে অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা দিতে না চায়, তবে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান সিদ্দিকুর।
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করব।’
বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হবে।
মন্ত্রী জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে তারা এইচএসসির চূড়ান্ত মূল্যায়ন ঘোষণা করতে চান। যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজার পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন অংশ নেয়। যাদের মধ্যে ২৬ দশমিক ০২ শতাংশ অনুত্তীর্ণ হয়। এ ছাড়াও, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৮ সালে ৩৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৩১ দশমিক ০৯ শতাংশ, ২০১৬ সালে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ পরীক্ষায় ফেল করেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সব শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত না।
এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা একটা উদাহরণ তৈরি করবে। করোনাভাইরাসের কারণে যদি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হয়, তবে আবারও আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে পরীক্ষাগুলোতে পাস করিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।’
আরেক কর্মকর্তা জানান, মহামারির কারণে এ বছরের পিইসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত ছিল যে, এই শিক্ষার্থীরা স্কুলে নিয়মিত পরীক্ষায় অংশ নেবে। এমনকি স্কুলগুলোতে পরীক্ষা ছাড়া শতভাগ পাস করিয়ে দেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়নি।’
উভয় কর্মকর্তা জানান, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গ্রেড দেওয়ার সময় সরকার কলেজের টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল দেখতে পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, স্কুল ও কলেজগুলোতে টেস্ট পরীক্ষাগুলো একই মানের না। তাই এইচএসসির গ্রেড দেওয়ার ক্ষেত্রে টেস্টের ফলাফল বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পাবে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক ও ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গাজী হাসান কামাল জানান, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জিয়াউল হক বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী অতিরিক্ত সুবিধা পাবে। তবে, এই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই।’
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ২২ মার্চ তা স্থগিত করা হয়। সরকার ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। শেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলবে।
Comments