৭৮ বছরে পা রাখলেন অমিতাভ বচ্চন
বলিউডের সিনেমাপ্রেমীদের মাঝে ১১ অক্টোবর শুরু হয় উৎসব। কারণ, এই দিনটাতে কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন। এবছর ৭৮-এ পা রাখলেন ‘বিগ বি’। যার ভরাট কণ্ঠস্বর আর অভিনয়-জাদুতে মোহিত সারাপৃথিবী। সত্তর দশকের রাগী যুবকের ইমেজ তিনি। তিনিই বলিউড চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী অভিনেতা।
অমিতাভ বচ্চনের টুইটার ভরে উঠেছে শুভেচ্ছা বার্তায়। টুইটারে তিনিও ইতোমধ্যে ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ বছর জন্মদিন উদযাপন করতে চাইছেন না এই অভিনেতা। তবে কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া নিয়ম ও সতর্কতা মেনে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানের শুটিং করছেন। জন্মদিনে শুটিং সেটে থাকতেই বেশি খুশি হন অমিতাভ বচ্চন। জন্মদিনের মাঝরাতে টুইট করেছেন, ‘জীবন যতদিন রয়েছে, ততদিনই সংগ্রাম।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এবারের জন্মদিনে পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই আছেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা। জয়া বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, আরাধ্যা, অমিতাভ-কন্যা শ্বেতা রয়েছেন বাড়িতে।
১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন অমিতাভ বচ্চন। তার বাবা প্রখ্যাত কবি হরিবংশ রাই বচ্চন ও মা তেজি বচ্চন। ১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্তানি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমায় যাত্রা শুরু অমিতাভ বচ্চনের। ১৯৭৩ সালে ‘জঞ্জির’ সিনেমা মুক্তি পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
টানা ২০ বছর একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা মধ্যে আছে— ‘আনন্দ’, ‘গুড্ডি’, ‘বাবুর্চি’, ‘জঞ্জির’, ‘সওদাগর’, ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’, ‘দো আনজানে’, ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’, ‘ডন’, ‘সুহাগ’, ‘লাওয়ারিশ’, ‘সিলসিলা’, কাভি কাভি’, ‘কসমে ওয়াদে’, ‘ত্রিশূল’, ‘মুকদ্দর কা সিকান্দর’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘কালা পাত্থার’, ‘দোস্তানা’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘শান’, ‘শক্তি’, ‘কাভি আল বিদা না কেহনা’, ‘শাহেনশাহ’, ‘অগ্নিপথ’, ‘বুম’, ‘বাগবান’, ‘ব্ল্যাক’, ‘সরকার’, ‘নিঃশব্দ’, ‘পা’, ‘অরক্ষণ’, ‘সত্যাগ্রহ’, ‘পিকু’, ‘ওয়াজির’, ‘পিংক’ ইত্যাদি।
চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ১৫টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। এ ছাড়া, শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’, ২০০১ সালে ‘পদ্মভূষণ’, ২০১৫ সালে ‘পদ্মবিভূষণে’ ভূষিত হয়েছেন তিনি। বিশ্ব চলচ্চিত্রে তার অনন্য স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। ২০১৯ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন অমিতাভ বচ্চন।
অমিতাভ বচ্চনের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা— স্ত্রী জয়া ভাদুড়ীর সঙ্গে পুনে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটেই প্রথম দেখা হয়। পরে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ ছবির সেটে আবার দুই জনের দেখা। ১৯৭৩ সালের ৩ জুন বাঙালি অভিনেত্রী জয়া ভাদুড়ীকে বিয়ে করেন তিনি। গত ৪৭ বছর ধরে দুই জন একসঙ্গে আছেন।
১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ ছবির শ্যুটিংয়ে রেখার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অমিতাভ। সে সময় জয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ঋষি কাপুর ও নীতু কাপুরের বিয়েতে রেখার সিঁথিতে সিঁদুর দেখেছেন অনেকেই। ১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সিলসিলা’ সিনেমাটি অমিতাভ-রেখা জুটির শেষ সিনেমা।
স্কুলের ক্রিকেট টিমে নাম লেখানোর খুব ইচ্ছে ছিল অমিতাভ বচ্চনের। মা তেজি বচ্চনের কাছে দুই টাকার জন্য বায়না করেন। কিন্তু, মা জানিয়ে দেন, স্কুলের ক্রিকেট টিমে ভর্তি করানোর মতো দুই টাকা তাদের কাছে নেই। এই ঘটনা খুব নাড়া দিয়েছিল ছোটবেলায়। দুই টাকার মূল্য কতটা, তা আজীবন মনে রাখছেন অমিতাভ।
বর্তমানে অমিতাভ-জয়া দম্পতির সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে সম্পত্তির মোট হিসাব পাওয়া গিয়েছিল ৪৯৩ কোটি। বর্তমানে স্থাবর সম্পত্তি ৪৬০ কোটির বেশি। একইসঙ্গে তাদের অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ৫৪০ কোটি টাকার। ২০১২ সালে যা ছিল ৩৪৩ কোটির কাছাকাছি।
১৯৮২ সালে মনমোহন দেশাই পরিচালিত ‘কুলি’ সিনেমার একটি অ্যাকশন দৃশ্যে পুনীত ইশারের পাঞ্চে আহত হন অমিতাভ বচ্চন। সেই আঘাত থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে কয়েক মাস লেগেছিল। মানুষের প্রার্থনায় সেরে উঠেছিলেন বলেই অনেকে মনে করেন। এটাকে অমিতাভ বচ্চনের ‘নবজন্ম’ বলা হয়।
Comments