চ্যালেঞ্জার নেই আজ ১০ বছর
নন্দিত কথাশিল্পী, চলচ্চিত্রকার ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে অভিনয়ে এসেছিলেন চ্যালেঞ্জার। প্রথম নাটকে ছোট্ট একটি চরিত্র ছিল তার। কিন্তু অল্প দিনেই শোবিজ জগতে ভালো একটি অবস্থান গড়েছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
তাকে চ্যালেঞ্জার নামটিও দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ও লেখা নাটক ও সিনেমায়।
আজ সেই জনপ্রিয় টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের প্রয়াণ দিবস। আজ ১০ বছর হয়ে গেল তিনি আমাদের মাঝে নেই।
তার ডাক নাম সাদেক। পুরো নাম এএসএম তোফাজ্জল হোসেন। অভিনয়ের কল্যাণে সারাদেশের মানুষ তাকে চেনেন চ্যালেঞ্জার নামে।
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত হাবলংগের বাজারে নাটক দিয়ে তার অভিনয়ে অভিষেক হয়। এছাড়া একই পরিচালকের দুই দুয়ারী সিনেমা দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় যাত্রা শুরু হয় তার।
এক সংগ্রামী জীবন ছিল চ্যালেঞ্জারের। কঠিন সংগ্রাম করে টিকে ছিলেন এবং ভাই-বোনদের মানুষ করেছিলেন। হঠাৎ অভিনয়ে এসে সুনাম, পরিচিতি, অর্থ সবই হয়েছিল তার।
কিন্তু, ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধি তাকে ১০ বছর আগে আজকের এই দিনে কেড়ে নেয়।
অভিনয় ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক নাটকে অভিনয় করে সব বয়সী দর্শকের কাছে সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। যেকোনো চরিত্রে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারতেন। ন্যাচারাল অভিনয় করার ক্ষমতা ছিল তার। ধনী, গরিব, নাপিত, মন্ত্রী যেকোনো চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারতেন এই অভিনেতা।
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চ্যালেঞ্জার অভিনীত সিনেমাগুলো হচ্ছে- দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও দারুচিনি দ্বীপ।
আমজাদ হোসেন পরিচালিত কাল সকালে সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত লাল-সবুজ সিনেমায়ও তিনি অভিনয় করেন।
অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত- মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন নাটকটি তাকে এনে দিয়েছিল বেশ জনপ্রিয়তা। এই নাটকে তিনি মন্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে সেই সময়ে বেশ পরিচিতি পান। নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, জাহিদ হাসান ও মাহফুজ আহমেদ।
রিয়াজ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জার একজন ভালো মানের অভিনেতা ছিলেন। তার অভিনয় গুণ ছিল অসাধারণ।’
চ্যালেঞ্জার সম্পর্কে জাহিদ হাসান বলেন, ‘চ্যালেঞ্জার ভাইয়ের সঙ্গে বেশকিছু কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। নিখুঁত অভিনয় করতেন তিনি। তার অভিনয় দেখে মনে হত, দীর্ঘদিন ধরে বুঝি অভিনয় শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন।’
উড়ে যায় বক পক্ষী ধারাবাহিক নাটকে তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন। এই নাটকের পরিচালকও ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। চ্যালেঞ্জার অভিনীত এই পরিচালকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে- পিচাশ মকবুল, আজিজ সাহেবের পাপ, নুরুউদ্দিন স্বর্ণপদক, চোর, খোয়াবনগর, বৃক্ষ মানব, শওকত সাহেবের গাড়ি কেনা, গণি সাহেবের শেষ কিছু দিন, সালেক দফাদার, জুতা বাবা, ওয়ারেন্ট, আজ জরির বিয়ে ইত্যাদি।
সালাহউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ভবের হাট ধারাবাহিক নাটকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে কাজ করেছিলেন।
সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘চ্যালেঞ্জার ছিলেন বড় মাপের শিল্পী। তাকে হারিয়ে আমাদের নাটক ও সিনেমার ক্ষতি হয়েছে।’
তার ছোট বোন অভিনেত্রী মুনিরা মিঠু বলেন, ‘ভাই নেই। এ কথাটি বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়। আমার এত ভালো মানুষ ভাইটি যেনো জান্নাতবাসী হন। তার তুলনা কেউ নেই। তাকে সব সময় মিস করি। ভাইহীন কীভাবে ১০টি বছর কেটে গেল, ভাবতেই চোখ ভেসে যায় জলে।’
২০১০ সালের ১২ অক্টোবর মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা যান চ্যালেঞ্জার।
Comments