থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা অমান্য করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ
থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা অমান্য করে বিক্ষোভ করছেন সরকারবিরোধীরা। গতকাল শুক্রবার আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান দিয়ে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এদিন কমপক্ষে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, জরুরি অবস্থা ভেঙে টানা তৃতীয় দিনের মতো শনিবারেও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে পুলিশি দমন-নিপীড়ন সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই। আমরা ১৭ অক্টোবরেও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখব।’
বিকেল ৪টা থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। আন্দোলনকারীরা পুলিশি হামলা, দমন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
থাইল্যান্ডে টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সরকারের পতন ও রাজতন্ত্রের সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ চলছে।
গত বৃহস্পতিবার চার জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে থাই সরকার।
বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর প্রায়ুথ চান-ওচার কার্যালয়ের বাইরে রাতে তাঁবু গেড়ে অবস্থান করেন কট্টর বিক্ষোভকারীদের একটি দল। পরে দাঙ্গা পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জরুরি অবস্থা ভেঙে কয়েক হাজার মানুষ ব্যাংককে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয়। শুক্রবারের সমাবেশেও কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। তাদের প্রতিহত করতে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল হেলমেট পরা দাঙ্গা পুলিশ।
এদিন সেখানে অনেকটা হংকংয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পুলিশ যন্ত্রণাদায়ক পানি ছুড়লেও ছাতা হাতে সেখানেই অনড় থাকেন অনেক বিক্ষোভকারী।
পুলিশ জানায়, শুক্রবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তারা আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া করেছে।
সরকারি মুখপাত্র অনুচা বোড়াপচ্যাশ্রি রয়টার্সকে বলেন, ‘এখানে কোনো দলেরই হার-জিত নেই। এটা শুধুই দেশের ক্ষতি করছে। সরকার প্রতিবাদকারীদের জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা না করে শান্তিতে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।’
ব্যাংককের এরওয়ান মেডিকেল সেন্টার জানায়, শুক্রবারের সংঘর্ষে তিন বিক্ষোভকারী ও চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও পুলিশি হামলায় নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রায়ুথ প্রশাসনের দ্বারা রাজনৈতিক দমন অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে সংশ্লিষ্ট সরকার ও জাতিসংঘের প্রকাশ্যে কথা বলা উচিত।’
থাইল্যান্ডে রাজা বা রাজ পরিবারের বিরুদ্ধাচরণ গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। রাজার সমালোচনা করলে দীর্ঘ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে দেশটিতে।
তবে, ছাত্রদের নেতৃত্বে গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। চলতি সপ্তাহেও দেশটির রাজধানী ব্যাংককে গত কয়েক বছরের মধ্যে বৃহত্তম বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার ব্যাংককে থাই রাজার গাড়িবহরকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার মানুষ। বিরোধীরা থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকা রাজা ভাজিরালংকর্নের ক্ষমতা কমানোর দাবি জানান। পাশাপাশি ২০১৪ সালে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার পদত্যাগও দাবি করা হয়।
Comments