রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে এভারটন-লিভারপুলের পয়েন্ট ভাগাভাগি
আগের ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলার কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা দারুণভাবেই শুরু করেছিল লিভারপুল। কিন্তু তাদের শহর প্রতিদ্বন্দ্বী এভারটন ছেড়ে কথা বলেনি। তাই দুদফা এগিয়ে গিয়েও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া হয়নি ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যদের। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ আর নাটকীয়তায় ঠাসা মার্সিসাইড ডার্বি শেষ হলো অমীমাংসিতভাবে।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে মঞ্চস্থ হয় রোমাঞ্চকর এক নাটক! থিয়াগো আলকান্তারার থ্রু বল খুঁজে নিয়েছিল ডি-বক্সে থাকা সাদিও মানেকে। তার কাট ব্যাকে নিখুঁতভাবে বল জালে পাঠিয়ে গোটা দলকে উল্লাসে মাতিয়েছিলেন লিভারপুল দলনেতা জর্ডান হেন্ডারসন। কিন্তু বিধি বাম! ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে দেখা যায়, পাস নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সময় অফসাইডে ছিলেন মানে। তাতে সফরকারীদের একরাশ হতাশা উপহার (!) দিয়ে বাতিল হয় গোলটি।
শনিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় এভারটন ও লিভারপুলের ম্যাচ শেষ হয়েছে ২-২ সমতায়। গুডিসন পার্কে তৃতীয় মিনিটে মানের গোলে পিছিয়ে পড়া স্বাগতিকরা কিছু সময় পরই সমতায় ফেরে মাইকেল কিনের লক্ষ্যভেদে। দ্বিতীয়ার্ধে মোহামেদ সালাহ ফের অতিথিদের এগিয়ে নিলেও ম্যাচের শেষ দিকে তা শোধ করে দেন দারুণ ছন্দে থাকা ডমিনিক কার্লভার্ট-লুইন।
উত্তেজনাপূর্ণ ও উপভোগ্য ম্যাচে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসেছিল দুদলই। বল দখলে ও শট নেওয়ায় অবশ্য এগিয়ে ছিল অলরেডসরা। তারা ২২টি শট নেয়, যার আটটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, এভারটনের ১১টি শটের পাঁচটি ছিল গোলমুখে। তবে তারা ১১ জন নিয়ে খেলা শেষ করতে পারেনি। থিয়াগোকে ফাউল করায় নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন দলটির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রিচার্লিসন।
শুরুতেই আচমকা এগিয়ে যায় লিভারপুল। বাম প্রান্ত থেকে অ্যান্ড্রু রবার্টসনের পাসে ক্রসবারের সামান্য নিচ দিয়ে বল জালে পাঠান মানে।
একটু পর বড় ধাক্কা খায় লিভারপুল। এভারটন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের ট্যাকলে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইককে। তবে তিনি অফসাইডে না থাকলে অবশ্য মিলতে পারত পেনাল্টি।
দ্বাদশ মিনিটে লুকাস দিনিয়ের ক্রসে মাথা ছোঁয়ালেও নিশানা ঠিক রাখতে পারেননি এভারটনের কার্লভার্ট-লুইন। পরের মিনিটে রবার্টসনের ক্রসে রবার্তো ফিরমিনোর হেডও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
১৯তম মিনিটে কার্লভার্ট-লুইনের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক আদ্রিয়ান। ওই কর্নার থেকেই স্কোরলাইন ১-১ করে এভারটন। হামেস রদ্রিগেজের ডেলিভারিতে হেড করে জাল খুঁজে নেন কিন। আদ্রিয়ান হাতে লাগিয়েও বল রুখতে পারেননি।
২৫তম মিনিটে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের ফ্রি-কিক ফিরিয়ে দেন পিকফোর্ড। আট মিনিট পর স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগোর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর সেনেগালের ফরোয়ার্ড মানের প্রচেষ্টাও বিফলে যায়।
বিরতির পর পঞ্চম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন ইংলিশ স্ট্রাইকার কার্লভার্ট-লুইন। দিনিয়ে গোলমুখে নিখুঁত ক্রস ফেললেও বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন তিনি।
৫৯তম মিনিটে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি এভারটনের। রিচার্লিশনকে হতাশ করে গোলপোস্ট। ছয় মিনিট পর হামেসের শট ফিরিয়ে দেন আদ্রিয়ান।
৭২তম মিনিটে ফের লিড নেয় লিভারপুল। হেন্ডারসনের ক্রস প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ডি-বক্সে বল পেয়ে যান সালাহ। প্রথম ছোঁয়ায় জোরালো শটে গোল করেন মিশরের রাজা খ্যাত তারকা।
পাঁচ মিনিট পর আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের কর্নারে জোয়েল মাতিপের হেড অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দিয়ে এভারটনকে ম্যাচে রাখেন পিকফোর্ড। আর চার মিনিট পরই সমতাসূচক গোল পেয়ে যায় তারা। পাল্টা আক্রমণে ফরাসি ডিফেন্ডার দিনিয়ের ক্রসে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে লাফিয়ে উঠে লক্ষ্যভেদ করেন কার্লভার্ট-লুইন। ৭ গোল নিয়ে লিগের গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষে আছেন তিনি।
এরপর রিচার্লিসনের লাল কার্ড ও হেন্ডারসনের গোল বাতিল হওয়ার ঘটনা বাদেও দুদলের সামনে সুযোগ এসেছিল পূর্ণ তিন পয়েন্ট আদায়ের। কিন্তু মানে যেমন কাজে লাগাতে পারেননি, তেমনি কার্লভার্ট-লুইনও পারেননি।
ড্র করায় লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান থাকছে এভারটনের দখলেই। পাঁচ ম্যাচে কার্লো অ্যানচেলত্তির দলের অর্জন ১৩ পয়েন্ট। টানা চার জয়ের পর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো পয়েন্ট খোয়াল তারা। অন্যদিকে, লিভারপুল উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। সমান ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১০।
Comments