গ্লোব বায়োটেকের সম্ভাব্য ৩ করোনা ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচওর খসড়া তালিকায়

বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের উৎপাদিত সম্ভাব্য তিনটি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আজ শনিবার গ্লোব বায়োটেক এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এই তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে গ্লোব বায়োটেক বিশ্বের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদনের দৌড়ে প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসবে প্রবেশ করলো। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই তালিকাভুক্তির মানে এই নয় যে এ ভ্যাকসিন ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি একটি ভাল অগ্রগতি। তবে, এর অর্থ এই নয় যে ভ্যাকসিনগুলো সফল। এখনও অনেক পথ বাকি।'
এর আগে, গত ৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাকন নাগ অভিযোগ করে বলেন, 'ডব্লিউএইচও বিনা কারণে তালিকাভুক্তিতে দেরি করছে।'
জানতে চাইলে ডব্লিউএইচও এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি বারদান জাং রানা দ্য ডেইলি স্টারকে সেদিন বলেন, 'তালিকায় আসা মানে কিছুই না। এতেই হয়ে যায় না। এরপর অনেক পথ যেতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'দেরি হয়নি। সদর দপ্তর তাদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করেছে।'
৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক তাদের ডি৬১৪জি ভ্যারিয়ান্ট এমআরএনএ ভ্যাকসিন ইঁদুরের ওপর প্রাক-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে সাফল্যের দাবি করে এবং ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেয়।
তবে, সেদিন অপর দুটি ভ্যাকসিন ডিএনএ প্লাজমিড ভ্যাকসিন ও অ্যাডেনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর ভ্যাকসিন নিয়ে তারা কিছু জানায়নি।
আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড দাবি করে, তারাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান ডব্লিউএইচও যাদের তিনটি ভ্যাকসিনকে কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তিনটিই প্রাক-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ের ভ্যাকসিন প্রার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভ্যাকসিনগুলোর তিন ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য গ্লোব বায়োটেক, আইসিডিডিআর,বি এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
তিনি বলেন, 'আইসিডিডিআর, বি এখন ট্রায়াল প্রোটোকল তৈরি করছে। এটি শেষ হলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এর কাছে ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে।'
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (ইউএস-সিডিসি) এর মতে, একটি ভ্যাকসিনের বিকাশের চক্রের সাধারণ ধাপগুলো হলো-অনুসন্ধানের পর্যায়, প্রাক-ক্লিনিকাল পর্যায়, ক্লিনিকাল ডেভলপমেন্ট, নিয়ন্ত্রক পর্যালোচনা ও অনুমোদন, উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ।
চূড়ান্ত পর্যায়ে ট্রায়াল বা তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মানে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে, যেখানে ভ্যাকসিনটি কয়েক হাজার মানুষকে দেওয়া হয় এবং এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মুনিরুদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্বব্যাপী ট্রায়াল চলা অনেক ভ্যাকসিনই চূড়ান্ত পর্যায়ে অকৃতকার্য হয়েছে। ব্যানকোভিড কেবল প্রথম পর্যায়ে আছে। এতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণ হয় না। বড় পরিসরে ট্রায়ালের পর আমরা এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি।'
Comments