লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামে শাকের দাম বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ

আদিতমারী উপজেলার একটি খেত থেকে শাক তুলছেন এক নারী। ছবি: স্টার

কৃষি নির্ভরশীল লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষ এই প্রথম চড়া দামে শাক কিনছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে শাক। এমনকি কৃষি পরিবারগুলোও শাক খাচ্ছেন না। তারা অধিক মূল্যে শাক বিক্রি করে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনছেন।

গেল বছর এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের শাক কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ১২-১৫ টাকায়। কিন্তু, একই শাক এ বছর বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫-৬০ টাকায়। কয়েক দফা বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে অনেক কৃষকের শাক খেতেই নষ্ট হয়েছে। এ কারণে গত বছরের চেয়ে ফলনও হয়েছে কম।

বাজারে প্রতি কেজি লালশাক বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা, প্রতি কেজি ঢেঁকিশাক ৫০-৫৫ টাকা, প্রতি কেজি লাউশাক ৫০-৫৫ টাকা, প্রতি কেজি পালংশাক ৬০-৭০ টাকা, প্রতি কেজি মারাশাক ৫০-৫৫ টাকা, প্রতি কেজি মিশালীশাক ৫৫-৬০ টাকা ও প্রতি কেজি কলমিশাক ৫০-৫৫ টাকা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক সন্তোষ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) জানান, দফায় দফায় বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে তাদের শাক বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেটুকু জমিতে শাক চাষ করা সম্ভব হয়েছে, সেখানেও ফলন কম হয়েছে। বাজারে শাকের দাম চড়া, তাই তারা নিজেরাও শাক না খেয়ে বিক্রি করছেন বলেও তিনি জানান।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার টেপাটারী গ্রামের কৃষি পরিবারের গৃহবধূ বাসন্তী রানী (৩০) জানান, তাদের মারাশাকের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাকের ফলন হয়েছে কম। ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে শাক তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। কিন্তু, পরিবারের লোকজন শাক খেতে পারছেন না। চড়া দামে শাক বিক্রি করে তারা মাছ কিনে খাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শফিয়ার রহমান (৭৫) জানান, তার জীবনে এই প্রথম এতো অধিক মূল্যে শাক বিক্রি করছেন। যেসব কৃষক বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হননি, তারা অপ্রত্যাশিত লাভবান হচ্ছেন শাক বিক্রি করে। তবে, ক্ষতিগ্রস্তরা সামান্য লাভবান হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকার কৃষক সেকেন্দার আলী (৬৫) বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সবজি খেতে পুনরায় শাক-সবজি লাগাচ্ছি। এসব শাক-সবজি বাজারে আসতে আরও এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। মাসখানেক পরে শাক-সবজির দাম কিছুটা কমবে। তবে, ২৫ টাকা দরের নিচে কোনো শাক-সবজি নামবে না।’

লালমনিরহাট শহরের থানা রোডের শাক ক্রেতা আফজাল হোসেন (৫৫) জানান, পরিবারে শাকের চাহিদা রয়েছে, তাই বাধ্য হয়েই চড়া দামে শাক কিনতে হচ্ছে। শাক-সবজি আর চাল কিনতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে, মাছের দাম সহনশীল রয়েছে বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে শীতের আগাম শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, তাড়াতাড়ি শীতের শাক-সবজি বাজারে নামতে শুরু করবে। আর তখন দাম কমে আসবে। উৎপাদন কম আর চাহিদা বেশি থাকায় চড়া দামে শাক বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে।’

Comments

The Daily Star  | English

Govt dissolves NBR as per IMF proposal

An ordinance published last night disbands NBR and creates two new divisions

2h ago