প্রবাসে

শেভেনিং বৃত্তি নিয়ে যেভাবে আসবেন যুক্তরাজ্যে

বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মফস্বলে বেড়ে ওঠা এক তরুণ আমি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে যে ১২ জন পেশাজীবী শেভেনিং স্কলারশিপ পেয়েছেন আমি তাদেরই একজন। আবেদন করেছিলাম গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর প্রায় দশ মাস অপেক্ষা করে চূড়ান্ত ফল পাই এই বছরের জুন মাসে। তারপর শুরু হলো বিলেতে যাওয়ার প্রস্তুতি। এরমধ্যে করোনার জন্য অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু যে শিক্ষাটা পেলাম সেটি হলো, নানা কিছু নিয়ে অযথা দুশিন্তা করার কোন মানে হয় না।
ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং, যুক্তরাজ্য। ছবি: লেখক

বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মফস্বলে বেড়ে ওঠা এক তরুণ আমি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে যে ১২ জন পেশাজীবী শেভেনিং স্কলারশিপ পেয়েছেন আমি তাদেরই একজন। আবেদন করেছিলাম গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর প্রায় দশ মাস অপেক্ষা করে চূড়ান্ত ফল পাই এই বছরের জুন মাসে। তারপর শুরু হলো বিলেতে যাওয়ার প্রস্তুতি। এরমধ্যে করোনার জন্য অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু যে শিক্ষাটা পেলাম সেটি হলো, নানা কিছু নিয়ে অযথা দুশিন্তা করার কোন মানে হয় না।

যাই হোক, শেভেনিং স্কলারশিপ পাওয়ার পর অনেকেই আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। আমিও তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি এবং আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু কিছু প্রশ্ন ঘুরেফিরে সবাই জিজ্ঞাসা করেন। আজকে সেগুলো এখানে লেখার চেষ্টা করব। আমি সবার অনুসন্ধানী প্রশ্ন শুনে উত্তরগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, শেভেনিং এ আবেদন করার সময় যেসব বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে চিন্তা করার কোন দরকারই নেই।

শেভেনিং এ আবেদন করার সময় যেসব বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে তার মধ্যে প্রথমেই আছে দুই বছরের ফুল টাইম কাজের অভিজ্ঞতা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি কিংবা ভলান্টারি কাজকে কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে আবেদন করতে চান। সেক্ষেত্রে আবেদনপত্র প্রথমেই বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।

মনে রাখবেন, ফুল টাইম কাজ মানে হচ্ছে আপনি কোনো অফিসে প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে কাজ করেন এবং এর জন্য আপনি মাস শেষে বেতন পান। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি কিংবা ভলান্টারি কাজ এর আওতায় পড়ে না। তবে হ্যাঁ, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি কিংবা ভলান্টারি কাজ আপনি মোটিভেশন লেখার সময় কিংবা সিভিতে উল্লেখ করতে পারেন।

শেভেনিং এ আবেদন করার সময় আবেদনপত্রে চারটি বড় বড় লেখা লিখতে হয়। এখানে আপনি আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখবেন কিন্তু আপনার লেখা হতে হবে একাডেমিক। ইনফরমাল কোন লেখা আবেদনপত্রে দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

শেভেনিং স্কলারশিপে আপনি সর্বোচ্চ তিনটি ইউনিভার্সিটিতে তিনটি বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। আপনি যখন ইউনিভার্সিটি ও সাবজেক্ট চয়েজের কথা আবেদনপত্রে উল্লেখ করবেন তখন অবশ্যই একই ধারার সাবজেক্ট পছন্দের কথা উল্লেখ করতে হবে, কিন্তু আপনার ইউনিভার্সিটি ভিন্ন হলে সমস্যা নেই।

ধরা যাক, আপনি পাবলিক পলিসি নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক। সুতরাং আপনি পাবলিক পলিসির মতো যেসব সাবজেক্ট আছে শুধু সেসব সাবজেক্টেই আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু আপনি এক ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক পলিসি আবার আরেক ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কিংবা আরেক ইউনিভার্সিটিতে জেন্ডার স্টাডিতে অ্যাপ্লাই করেছেন সেটা কিন্তু হবে না। এ ক্ষেত্রে আপনার আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আপনি যদি এর আগে ব্রিটিশ সরকারের কোনো বৃত্তি নিয়ে ইউকেতে পড়াশোনা করে থাকেন তাহলে আপনি শেভেনিং এ আবেদন করতে পারবেন না।

কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে চিন্তা করার কোন দরকারই নেই। অনেকেই বলে থাকেন বাংলাদেশে মাস্টার্স করে থাকলে শেভেনিং এ নাকি আবেদন করা যায় না। আমি বলব, এ কথার মোটেও কোন ভিত্তি নেই। তবে আপনি আবেদন করার সময় শুধু মাত্র ব্যাচেলরের কথা উল্লেখ করতে পারেন।

আইইএলটিএস পরীক্ষা নিয়ে অনেকেই একটা দ্বিধাদ্ব থাকেন। শেভেনিং এ আবেদন করার সময় আইইএলটিএস এর স্কোর না থাকলেও চলবে। আপনি যখন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হবেন, তারপরে শেভেনিং সেক্রেটারিয়েট আপনাকে একটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে দেবে, তারমধ্যেই আইইএলটিএস এর স্কোর সরবরাহ করলেই হবে। এ নিয়ে আবেদনের সময় চিন্তা করার দরকার নেই। আবার অনেকেই বলে থাকেন, আইইএলটিএস এর স্কোর বেশি পেলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এ কথারও কোন ভিত্তি নেই।

শেভেনিং এ আবেদন আর ইউনিভার্সিটিতে আবেদন দুটি পৃথকভাবে করতে হয়। অনেকেই বলে থাকেন শেভেনিং এ আবেদন করার আগে ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ কথারও কোন ভিত্তি নেই। অতএব আপনি যখন শেভেনিং এ আবেদন করবেন তখন আপাতত ইউনিভার্সিটির অফার লেটার নিয়ে চিন্তা না করলেও হবে। 

আপাতত এসব বিষয় মাথায় রেখে আবেদন শুরু করে দিন। তবে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আবেদন করলে আবেদনপত্র অনেক নিখুঁত হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। করোনা পরবর্তী সময়গুলোতে সব জায়গাতেই একেকটা স্কলারশিপের আসনের বিপরীতে প্রার্থীর সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এখন থেকেই নিজেকে আলাদাভাবে প্রস্তুত করতে শিখুন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন তাতে দেখবেন কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার প্রোফাইল সবার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সবার জন্য শুভ কামনা।

লেখক: শোয়াইব মোহাম্মদ সালমান, মাস্টার্স শিক্ষার্থী, পাবলিক পলিসি, ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং, ইউকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago