সৌদি আরব যেতে নতুন অভিবাসী শ্রমিকদের নতুন বিপত্তি
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/extension-saudi-visas.jpg?itok=34MgYN8O×tamp=1603101649)
করোনা মহামারির মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় ২৫ হাজার অভিবাসী শ্রমিককে পুনরায় ভিসা দিতে নতুন করে কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে সৌদি আরব। এতে নতুন করে বিপত্তিতে পরেছেন অভিবাসী শ্রমিকরা।
মহামারির আগে ভিসা পেলেও প্রাদুর্ভাবের কারণে যারা যেতে পারেননি তাদের নতুন করে কাগজপত্রের সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্ট এবং ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন এই খাতে সংশ্লিষ্টরা।
বিদেশে ‘লাভজনক’ চাকরির আশায় এরই মধ্যে এই অভিবাসী শ্রমিকরা ধার করে কিংবা কষ্টার্জিত আয়ের পুরো অর্থই খরচ করে ফেলেছেন কাজ এবং ভিসা পেতে। করোনা মহামারির মধ্যে যেতে না পারায় এমনিতেই কঠিন দিন পার করছেন তারা। তার মধ্যে নতুন করে সব কাগজপত্র চাওয়া মানে তাদের পুনরায় আর্থিক সংকটে ফেলে দেওয়া।
উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় মো. শাহাদতের বিষয়টি।
চাঁদপুরের এই বছর কুড়ির মানুষটি সৌদি আরবের একটি খেজুর বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য ভিসা পেয়েছিলেন। তিনি ইতোমধ্যে এই ভিসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং ফ্লাইট হওয়ার পর আরও আড়াই লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন।
এছাড়াও তিনি মেডিকেল ও অন্যান্য সার্টিফিকেটের জন্য ২০ হাজার টাকা খরচ করেছেন।
গত ২৬ মার্চ তার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সব ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।
মো. শাহাদত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আবার ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হলে সেটা আমার জন্য বোঝা হয়ে যাবে।’
একই অবস্থা টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের ৩০ বছর বয়সী কামরুল হাসানেরও। তিনি বলেন, ‘এখন আমাকে আবার সব কাজ নতুন করে করতে হবে।’
পুনরায় ভিসা দেওয়ার বিষয়টি সৌদি নিয়োগকারীদের ওপর নির্ভর করবে। করোনার আগে তারা শ্রমিক নিয়োগের জন্য স্থানীয় নিয়োগকারীদের ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়েছিলেন। কিন্তু, করোনার কারণে তৈরি অর্থনৈতিক মন্দায় তারা এখন শ্রমিক নিয়োগ দেবেন কিনা তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, সৌদি সরকারের এই নতুন ব্যবস্থা গরিব শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার খরচ বাড়িয়ে দেবে। অনেক শ্রমিক তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় অনেক বড় অংকের টাকা খরচ করে ফেলেছেন। অথচ, গত সাত থেকে আট মাস তাদের বেশিরভাগই বেকার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি এখন তাদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয় তাহলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান জানান, মহামারির আগে বিদেশে চাকরির জন্য ৮৬ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের প্রায় ৮০ শতাংশের ভিসা হয়ে গিয়েছিল। যার বেশিরভাগের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সৌদি আরব নতুন করে প্রায় প্রায় ২৫ হাজার ভিসা দিতে রাজি হয়েছে।
একই দিন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, মার্চ মাসে সৌদি যাওয়ার ভিসা যাদের ছিল, কিন্তু যেতে পারেনি, তাদের ভিসা বাতিল করা হবে এবং নতুন করে ভিসা দেবে সৌদি দূতাবাস।
ঢাকায় সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের মিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা এ মন্তব্য করেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এর তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মার্চ পর্যন্ত সৌদি নিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। করোনা মহামারির কারণে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বায়রার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ জানান, মহামারির আগে নিয়োগকর্তারা নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশি নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে ডিমান্ড লেটার পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রকল্পে কর্মী নিয়োগে তারা এখন কতটা সক্ষম সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বিএমইটির মহাপরিচালক শামসুল আলম জানান, আঙুলের ছাপ নেওয়ার সময় তারা অভিবাসী শ্রমিকদের স্মার্ট কার্ড (বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড) দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড কার্যকর থাকবে।’ বিএমইটিতে স্মার্ট কার্ডধারীদের নতুন করে কিছু করতে হবে না।
ভিসা অ্যাডভাইসের মেয়াদ শেষ
বায়রার তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে ৮৬ হাজার শ্রমিক পাঠানোর যে ভিসা অ্যাডভাইস কপি রয়েছে তার মেয়াদ মার্চে শেষের দিকে ছিল।
তিনি বলেন, শ্রমিক চাহিদাপত্রের সঙ্গে থাকা ভিসা অ্যাডভাইসের অনুলিপির বৈধতা থাকে এক বছর।
বাংলাদেশের নিয়োগকারীরা সাধারণত সৌদি কর্তৃপক্ষ ইস্যু করার তারিখ থেকে পাঁচ থেকে ছয় মাস পরে ভিসা অ্যাডভাইসের অনুলিপি পান। ফলে, মার্চের দিকেই ভিসা অ্যাডভাইসের অনুলিপিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বলে তিনি যোগ করেন।
Comments