খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ দেওয়া শুরু
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে প্লাটিনাম জুট মিলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অর্থ প্রদান শুরু হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান গোল্ডেন হ্যান্ডশেক উদ্বোধন করে প্লাটিনাম জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসায়নকৃত ৪৫ জন শ্রমিকের মাঝে চেক ও সঞ্চয়পত্র হস্তান্তর করেন।
বেগম মন্নুজান সুফিয়ান খুলনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য। তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের পাঁচটি সরকারি পাটকল।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের ৩ হাজার ৮৩৬ জন শ্রমিকে ২১৬,২৮,০৬,০২৪ ঢাকা এবং মোট ৩,৬৭৪ জন শ্রমিকের ২১৪,৮৪,৬৭১ টাকা তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এছাড়া বদলী শ্রমিকদেরও মজুরি কমিশনের অর্থ প্রদান করা হবে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, জিটুজি, পিপিপি অথবা লিজিং ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পাটকলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। মিলসমূহ চালু হলে দক্ষ শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে চাকরি পাবেন।
ইতিমধ্যে করিম জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা অর্ধেক চেকের মাধ্যমে এবং অর্ধেক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাটের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যক্তিখাতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাটকল থাকা দরকার। বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন পাটকলের কেবল উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার চেয়ে ১৩ থেকে ২৭ শতাংশ বেশি টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মিলের দুরবস্থার জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়। কর্মকর্তারা ভিজেপাট ক্রয় করেন, শ্রমিকরা নয়। কোটি কোটি টাকার অবিক্রীত পাটপণ্য বিক্রির দায়িত্ব কর্মকর্তাদের। প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত এবং অবসায়নকৃত শ্রমিকদের পাওনা টাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে যাবে। কোন নেতা বা দালাল এ টাকা নিয়ে শ্রমিকদের ঠকাতে পারবে না।
বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. গোলাম রব্বানী বলেন, প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের চেক প্রদানের মাধ্যমে খুলনা জোনের পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু হল। আজ প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের ৪৫ জন শ্রমিকের সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা প্রদানের স্লিপসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে টাকা পায় তা নিশ্চিত করতে শ্রম অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
জানা গেছে, নোটিশ মেয়াদের, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের ৬০ দিনের মজুরি এরই মধ্যে পেয়েছেন শ্রমিকরা।
প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ), গ্র্যাচুইটি, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ সমুদয় পাওনার ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বিজেএমসির কাছে পৌঁছেছে।
উল্লেখ্য, লোকসান থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ স্থায়ী শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হচ্ছে বলে গত ২৮ জুন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। ১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে সভার পর গত ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্ধ ঘোষণা করা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রতি শ্রমিক গড়ে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। সরকার তাদের পাওনার অর্ধেক নগদে ও বাকি অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র দেবে।
Comments