গায়ে হলুদের ছবিতে বাজে মন্তব্য, পাত্তা দিচ্ছেন না ক্রিকেটার দম্পতি
গায়ে হলুদের পোশাকে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সানজিদা ইসলামের হাস্যোজ্জ্বল কয়েকটি ছবি কদিন আগে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা কেড়ে নিয়েছে মানুষের আকর্ষণ। এমনকি আইসিসিরও নজরে পড়েছে তার ছবিগুলো। পরনের শাড়ি ও গহনার সঙ্গে সানজিদার হাতে ব্যাট থাকায় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিচারে ক্রিকেটারদের ‘বিয়ের ফটোশুটের নমুনা’র তকমাও পেয়েছে সেসব।
হলুদের সাজে এই ক্রিকেটারের ছবিতে অনেকেই শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশে যেমনটা ঘটে থাকে- কিছু অস্বস্তিকর বাজে মন্তব্যও এসেছে। যার প্রতিক্রিয়ায় তার শ্বশুর বাড়ি থেকেও ছবিগুলো নিয়ে তোলা হয়েছিল আপত্তি। তাতে শুরুতে খারাপ লেগেছে সানজিদা ও তার ক্রিকেটার স্বামী মীম মোসাদ্দেকের। তবে পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি নেতিবাচক মন্তব্যকে পাত্তা দেওয়ার কোনো কারণ আর দেখছেন না এই ক্রিকেটার দম্পতি।
গত ১৭ অক্টোবর রংপুর বিভাগীয় দলের ক্রিকেটার মোসাদ্দেককে বিয়ে করেন সানজিদা। তার আগে গায়ে হলুদের দিন ছবি তুলতে রংপুর স্টেডিয়ামের কাছে কাশবনের দিকে গিয়েছিলেন তিনি। একটা মাঠে কিশোরদের খেলতে দেখে ব্যাট হাতে নিয়ে করেন ‘শ্যাডো’। দুই সতীর্থ সোবহানা মোস্তারি ও হাসনাত সিনথিয়া তাদের মোবাইলে ধারণ করেন এই দৃশ্য। তৈরি হয় মনে রাখার মতো মুহূর্ত। হলুদের সাজে ব্যাট হাতে এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে তার মোটরবাইকে বসে থাকার একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে।
অনেকের প্রশংসা পেলেও কিছু মানুষ আজেবাজে মন্তব্য করলে শুরুতে মুষড়ে পড়েন সানজিদা। বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে এই জাতীয় ক্রিকেটার জানান, পরিবারের লোকজনও মানুষের বাজে মন্তব্যে আহত হয়েছিল। তবে এসব মন্তব্যে যে কিছু যায় আসে না তা এখন বুঝতে পারছেন তিনি, ‘আমরা একটা নতুন জীবন শুরু করেছি | আমরা সবার কাছ থেকে দোয়া এবং শুভকামনা আশা করি, কিন্তু অনেকে খুব বাজে মন্তব্য করেছেন। সেটা খুব খারাপ লেগেছে। এই নিয়ে প্রথমে বেশ অশান্তি শুরু হয়েছিল পরিবারে। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন খুব মর্মাহত ছিলেন। তবে আমি তাদের বুঝিয়ে বলেছি যে। আপনি যা-ই করেন না কেন কিছু মানুষ সব সময় আপনার সমালোচনা করবে। আবার অনেক মানুষ তো প্রশংসাও করেছেন।’
তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, ‘আমার বিয়ের শাড়ি পরা কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটা নিয়ে সমালোচনা করার মতো কিছু আছে কি?’
একই মত তার স্বামী ও রংপুর বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা মীম মোসাদ্দেকের। এসব আজেবাজে মন্তব্য পাত্তা দেওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না তিনি, ‘সানজিদার শাড়ি পরা কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। কিছু মানুষ নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। এটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি এইগুলো পাত্তা দেই না।’
গত এপ্রিল থেকে দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। ছেলের বউ ক্রিকেটার। এই পরিচয় প্রথমে মোসাদ্দকের বাবা ইতিবাচকভাবে নেননি। পরে তিনি বুঝেছেন, সানজিদার সঙ্গে কথা বলে বদলেছে তার চিন্তার জগৎ, ‘গত এপ্রিল থেকে আমাদের বিয়ের কথা শুরু হয়। আমি পেশায় ক্রিকেটার শুনে প্রথমে আমার শ্বশুর একটু আপত্তি জানিয়েছিলেন। কারণ, আমার শ্বশুর খুব ধার্মিক একজন মানুষ। পরে আমার সঙ্গে দেখা ও কথা হবার পরে তার ভুল ভাঙে। পরে তিনি আমাদের বিয়েতে সানন্দে মত দেন।’
‘আমার শাশুড়ি খুবই ভালো মানুষ। তিনি আমার শ্বশুরকে সব বুঝিয়ে বলেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! এখন আমারা বেশ ভালো আছি।’
মোসাদ্দেক জানান, বিয়ের পরও সানজিদার ক্রিকেট খেলায় কোনো বাধা হবে না তার বাড়ির লোকজন, ‘আমার বাবা খুব ধর্মভীরু মানুষ | প্রথমে তিনি একটু আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু আমার মা তাকে বুঝিয়েছেন যে, আমি তাদের সন্তান হয়ে যদি ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে ছেলের বউ কেন পারবে না। পরে বাবা রাজি হয়েছেন। এখন পরিবার থেকে আমরা দুইজনই ক্রিকেট খেলার জন্য সমর্থন পাব।’
২০১৪ সালে রংপুর একাডেমিতে সানজিদার সঙ্গে পরিচয় হয় মোসাদ্দেকের। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে বলতেই মন বিনিময় হয়ে যায় তাদের।
বাংলাদেশের হয়ে ১৬ ওয়ানডে ও ৫৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছেন ডানহাতি ব্যাটার সানজিদা। মোসাদ্দেক রংপুরের হয়ে তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। ঢাকায় প্রথম বিভাগ লিগেও খেলেন তিনি।
অন্যান্য ছবি: মাসুদ রায়হান, সোবহানা মোস্তারি ও হাসনাত সিনথিয়া
Comments