আত্মরক্ষায় মার্শাল আর্ট শিখছেন লালমনিরহাটের নারী শিক্ষার্থীরা

স্বেচ্ছাশ্রমে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন লালমনিরহাটের মার্শাল আর্টকন্যা খ্যাত সান্ত্বনা রানী রায়। ছবি: দিলীপ রায়

কিছু দিন আগেও অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের মার্শাল আর্ট শিখতে অনুমতি দিতে আগ্রহী ছিলেন না। তবে, দেশব্যাপী নারীদের প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় আত্মরক্ষায় বলিষ্ঠ হতে মার্শাল আর্ট শেখাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অভিভাবকরা। বর্তমানে লালমনিরহাটের গ্রামে গ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের মার্শাল আর্ট চর্চা করতে দেখা যাচ্ছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামে খোলা মাঠে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থী এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

গ্রামের নারী শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন লালমনিরহাটের মার্শাল আর্টকন্যা খ্যাত সান্ত্বনা রানী রায়। নিজের সদিচ্ছা থেকে তিনি গ্রামের নারী শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ করে মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য নারীদের আত্মরক্ষায় সচেষ্ট ও বলিষ্ঠ করা। নারীদের মনোবল দৃঢ় করা এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার মন্ত্রণা দেওয়া।

আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর টেপাটারী গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী নিপা রানী রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আপাতত আত্মরক্ষায় মার্শাল আর্ট শিখছি। মার্শাল আর্ট শেখার কারণে আমার মনোবল দৃঢ় হচ্ছে এবং যে কোনো ধরনের সহিংসতায় আমি আত্মরক্ষায় সচেষ্ট ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারব। মার্শাল আর্ট শেখার কারণে আমার শারীরিক গঠনও সুঠাম থাকছে। নিজের থেকে নিরলসভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা ও সাহস পাচ্ছি।’

একই গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী রিয়া খাতুন বলেন, ‘মার্শাল আর্ট শিখতে একটু শারীরিক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, শেখার পর আনন্দ লাগছে। মার্শাল আর্ট শেখার কারণে কোনো কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস পাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এখন আমাকে নিয়ে কেউ কোনো বাজে মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সান্ত্বনা দিদি আমাদেরকে স্বেচ্ছাশ্রমে মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছেন।’

একই উপজেলার তালুক হরিদাস গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী সাথী রানী রায় বলেন, ‘মার্শাল আর্ট শুধু আত্মরক্ষার কাজে আসছে না, এটি আমাদের নিরলসভাবে পরিশ্রমী হতে সাহায্য করছে। শরীরের রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছে এবং মনকে উৎফুল্ল রাখছে। আমি মনে করি প্রত্যেক নারী শিক্ষার্থীর মার্শাল আর্ট শেখা দরকার।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামে খোলা মাঠে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীরা এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ছবি: দিলীপ রায়

নামুড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী জান্নাতুল আখতার বলেন, ‘মার্শাল আর্ট শেখার কারণে আমি সাহসী হয়ে উঠেছি। এখন শুধু নিজেকে নয় অন্যদের রক্ষার মনোবল তৈরি হয়েছে। একসময় স্কুল-কলেজে যাওয়া আসার পথে অনেকেই আজেবাজে মন্তব্য করার সাহস পেতো, কিন্তু এখন আর তারা সাহস পাচ্ছেন না। কারণ তারা জেনেছে আমি মার্শাল আর্ট শিখেছি।’

নামুড়ি গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাদেরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকমাস আগেও মেয়েদের মার্শাল আর্ট শিখতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু, এখন আমি নিজেই তাদের মার্শাল আর্ট শেখাতে আগ্রহী। বর্তমানে নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে আমি মনে করি নারীদের আত্মরক্ষায় সচেষ্ট ও বলিষ্ঠ হতে হবে।’

লালমনিরহাটের মার্শাল আর্টকন্যা হিসেবে পরিচিত সান্ত্বনা রানী রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির আগে আমি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের মার্শাল আর্ট ‘তায়কোন্দো’ প্রশিক্ষণ দিতাম।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় গ্রামে গ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ করে তাদেরকে খোলা মাঠে খোলা আকাশের নিচে এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নারীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি। তাদের আত্মরক্ষায় সচেষ্ট বলিষ্ঠ করতে আমি স্বেচ্ছাশ্রমে এ প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমি নিজ এলাকায় একটি ‘তায়কোন্দো ইনস্টিটিউট’ চালুর স্বপ্ন দেখি। আমার স্বপ্ন সত্যি হলে নারী শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মার্শাল আর্ট শেখার সুযোগ পাবেন।’

Comments

The Daily Star  | English

BNP hails AL ban, urges speedy trials

Fakhrul seeks election roadmap, citing public frustration over the lack of democratic process

52m ago