যেন শত পাহাড়ের গণহত্যা

Rangapahar_23Oct20.jpg
গত দুই বছর ধরে রাঙ্গাপাহাড় গ্রামের পাহাড় কাটা হচ্ছে। ছবি: মোস্তফা ইউসুফ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এক পাশে রাঙ্গাপাহাড় গ্রাম। ওই জনপদের সবচেয়ে বড় পাহাড়টির নামে গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। গত দুই বছরে নাম একই থাকলেও হারিয়ে গেছে ওই গ্রামের সব পাহাড়।

পাহাড়গুলো কোথায় হারিয়ে গেছে সে উত্তর মিলবে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের দিকে তাকালে। সব পাহাড় কেটে আনা মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে রেললাইন। পাহাড় থেকে মাটি আনতে ফসলি জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে এক কিলোমিটার দৈঘ্যের একটি মাটির সড়ক। ভরাট করা হয়েছে একটি প্রবাহমান খালও। মাটির সড়ক ধরে মিনিট বিশেক হাঁটলে দেখা মিলবে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া সব পাহাড়ের।

‘ঐখানে ছিল সবচেয়ে বড় পাহাড়টি। বছর খানেক আগে সেটি কাটা হয়ে গেছে’— স্থানীয় বাসিন্দা আবু শাহেদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা বলেন। গত দুই বছর ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছে জানিয়ে শাহেদ বলেন, আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি। কিছু বলতে পারিনি। কারণ ইলিয়াস নামে এক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তিনি খুবই প্রভাবশালী।

পুরো দিন চেষ্টা করে মিললো ইলিয়াসের পরিচয়। তার বাড়ি চুনতি ইউনিয়নের বড়ঘোণা এলাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী ইলিয়াস থাকেন কক্সবাজারে। রেলওয়ের প্রকল্পে মাটি সরবরাহ করছেন এই ব্যবসায়ী।

রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন গ্র্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক রাশেদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তারা মাটি নেন। মাটি নেওয়ার আগে তাদের জমির দলিলাদি সঠিক আছে কি না সেটা যাচাই করে তারপর তারা চুক্তিতে যান।

‘আমরা ইলিয়াসের সঙ্গে চুক্তি করেছি মাটি সরবরাহের। চুক্তি অনুযায়ী, তার কথা ছিল আজিজনগর থেকে মাটি দেবে। রাঙ্গাপাহাড় থেকে যে মাটি দিচ্ছে সে বিষয়টি আমরা জানি না’, বলেন তিনি।

তবে, রেললাইন নির্মাণের স্থানে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও তমা কন্সট্রাকশনের গাড়ি দেখেছেন এ প্রতিবেদক। ইলিয়াসকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাকে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি।

কাটা হয়েছে দুই কোটি দুই লাখ ঘনফুট পাহাড়

গত ১৬ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে। তারা প্রায় দুই কোটি দুই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এমন ভয়াবহ পাহাড় কাটা তিনি এর আগে দেখেননি।

‘রাঙ্গাপাহাড় এলাকায় কাটা হয়েছে দুই কোটি দুই লাখ ঘনফুটের মত পাহাড়। স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ মাটি ব্যবহার করা হয়েছে রেললাইন নির্মাণে’, বলেন তিনি।

দুই বছর ধরে পাহাড় কাটা হলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, ‘খুব দুর্গম এলাকা হলে পাহাড় কাটার খবর সহজে পাওয়া যায় না। আমাদেরও কিছু ব্যর্থতা আছে এ ক্ষেত্রে। যখনই আমি খবর পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে টিম পাঠিয়েছি ঘটনাস্থলে। পাহাড়ের ধ্বংযজ্ঞের একটা প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

13h ago