বাইডেন জিতলে যেমন হতে পারে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জোরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যেন ভোগ করছেন ‘যা খুশি তা কিছু করার’ স্বাধীনতা। কিন্তু, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হন তাহলে সেই স্বাধীনতা কতোটা ভোগ করতে পারবেন যুবরাজ?
গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রিয়াদের মানবাধিকার রেকর্ড, বিশেষ করে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা, দেশটির নারী মানবাধিকার কর্মীদের কারাবন্দি ও ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে।
ওয়াশিংটনে জোড়ালোভাবে লবিং করে সৌদি আরবের ক্ষমতাসীনরা তাদের আঞ্চলিক শক্র ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করাতে পেরেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা মনে করেন, বাইডেন হয়তো সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বের ওপর শর্ত চাপাতে পারেন।
তারা মনে করেন, দেশ দুটির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তা সহজেই নষ্ট করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না। বাইডেন প্রশাসন হয়তো কিছু কিছু বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চাইবে। বিশেষ করে নারী মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে।
খাশোগি হত্যা ও ইয়েমেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণায় সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনা করার কথা বলছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকরা যে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ পেয়েছেন ‘যা খুশি তা করার’ বাইডেনের শাসনামলে তা হয়তো সম্ভব হবে না। তার প্রশাসন হয়তো শক্র-মিত্র সবার সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সম্পর্ক বজায় রাখার পথে হাঁটবে।
এই ডেমোক্রেট নেতা বিশ্বে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জোরদার ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সম্মলিতভাবে মোকাবিলা করতে ভূমিকা রাখবেন বলেও আশা করেন অনেক বিশ্লেষক।
সৌদি যুবরাজ ক্ষমতায় এসে প্রথমে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কথা বলে দেশের সংস্কারপন্থি ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর তিনি বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন ও প্রতিপক্ষদের কারাবন্দি করেন। আধুনিক ভাবনার মানুষ হিসেবে যে ইমেজ অন্যদের মনে তৈরি করেছিলেন তা নষ্ট করতে খুব বেশি সময় নেননি তিনি।
খাশোগি হত্যার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিবাদ-মুখর হয়ে উঠলে তিনি এ হত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন। অথচ, এ হত্যাকাণ্ড যে যুবরাজের অগোচরে ঘটেনি তার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যখন ভোট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে তখন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এক ওয়েবিনারে (অনলাইন সেমিনার) বলেন, সৌদি নিরাপত্তা বিভাগকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে যাতে ‘এ ধরনের (খাশোগি হত্যা) ঘটনা আর কখনো না ঘটে’।
তবে সৌদি নারী মানবাধিকার কর্মীদের বিচারের বিষয়ে তিনি শক্ত অবস্থান নেন। বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অপরাধের’ অভিযোগ উঠেছে।
রিয়াদ-ভিত্তিক গালফ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান আব্দুলআজিজ সাগের রয়টার্সকে বলেন, ‘বাইডেন নির্বাচিত হলে ভালো দিক যেটা হতে পারে- তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে হয়তো নজর কমিয়ে দিতে পারেন। আর খারাপ দিক যেটা হতে পারে- তিনি সৌদি আরবসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি কঠোর অবস্থান নিতে পারেন।’
তবে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে তা জানার আগ্রহ সৌদিদের মধ্যে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সৌদি কলামিস্ট মুহাম্মদ আল আল-শেখ স্থানীয় দৈনিক আল-জাজিরাহতে লিখেছেন, ইরানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে যে ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে’ বাইডেন তা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ট্রাম্প বিজয়ী হন তাহলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ও মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সৌদি আরব এসব আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে হয়তো একটি ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় জোট গঠন করবে।
তবে বিজয়ী বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি গ্রহণের পরই আসলে জানা যাবে কোন দিকে যাচ্ছে সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক।
Comments