রাবি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
RU.jpg
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারী। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

গত বুধবার ইউজিসির তদন্ত কমিটি রাবির শীর্ষস্থানীয় এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শেষে সুপারিশসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

ইউজিসির সদস্য এবং এই তদন্ত কমিটির প্রধান দিল আফরোজ বেগম আজ শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তদন্ত শেষে রাবি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং আরও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা মোট ২৫টি অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

এ ছাড়া, তদন্তে সহযোগিতা না করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণেরও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানা যায়, চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি ৬২ জন শিক্ষক এবং দুজন চাকরিপ্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ইউজিসিতে দাখিল করে। অভিযোগপত্রে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক করে, ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে উন্মুক্ত শুনানিরও আয়োজন করে।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপারিশসহ সর্বমোট ৭৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন রয়েছে।

তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্য ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে তার কন্যা ও জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

এ ছাড়া, শিথিল করা এই নিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শিথিল করা এই নীতি অনুসরণ করে নিয়োগপ্রাপ্ত সব শিক্ষক (৩৪ জন শিক্ষক), কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল করার সুপারিশও করা হয়েছে ইউজিসির এই প্রতিবেদনে।

উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি ১৮ মাস ধরে নানা অজুহাতে দখলে রেখেছেন, এমন অভিযোগ তুলে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা আদায়েরও সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দেয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, ‘রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Fakhrul warns against long interim govt rule

Public won't tolerate interim govt staying for a long time: Fakhrul

Elected representatives should decide what reforms are necessary, says BNP secretary general

4h ago