৯ মাসের ‘কাঁটা’ কেন শেষ হলো না ৭ বছরেও, অনুদানের অন্য ছবির খবর

কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘কাঁটা’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদান পেয়েছিলেন। খ্যাতিমান সাহিত্যিক শহীদুল জহিরের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন সিনেমাটি। সেবছর তিনি অনুদান পেয়েছিলেন ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
'কাঁটা' ছবির একটি দৃশ্য

কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘কাঁটা’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদান পেয়েছিলেন। খ্যাতিমান সাহিত্যিক শহীদুল জহিরের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন সিনেমাটি। সেবছর তিনি অনুদান পেয়েছিলেন ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

সরকারি অনুদানের প্রথম চেক হাতে পাওয়ার নয় মাসের মধ্যে পরিচালককে ছবির কাজ শেষ করতে হয়। তবে বিশেষ অনুরোধে পরিচালক সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন। এদিকে সাত বছর পার হয়ে গেলেও টোকন ঠাকুর তার ‘কাঁটা’র কাজ শেষ করতে পারেননি। তাই গত ৩ অক্টোবর তথ্য মন্ত্রণালয়ের মামলায় নির্মাতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়৷ সরকারি টাকা তছরুপের অভিযোগে ২৫ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার হন টোকন ঠাকুর। আজ জামিন পেয়েছেন তিনি।

‘কাঁটা’র শুটিং পর্ব ইতমধ্যে শেষ হয়েছে। ডাবিং, আবহসংগীত আর সম্পাদনার কাজ বাকি রয়েছে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে টোকন ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আমার শুটিংয়ের আয়োজনের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেটা অনুদানের টাকায় সম্ভব হয়নি। শিল্পীদের অনেকেই ভালোবেসে সিনেমায় কাজ করেছেন। অনুদানের টাকা শেষ হবার পর বাইরে থেকে অনেকের কাছে অর্থ নিয়ে ছবির শুটিং করেছি। বাকি অর্থের জন্য অনেক জায়গায় বলেছি, প্রোপোজালও জমা দিয়েছি। এখন ছবিটার কিছু কাজ শেষ হলেই মুক্তি দিতে পারব।’

২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘কাঁটা’ ছবির সঙ্গে অনুদান পাওয়া অন্য ছবিগুলো হলো- ‘একাত্তরের মা জননী’, ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’, ‘মেঘমল্লার’ ও ‘খাঁচা’। ছবিগুলো ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে। তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ‘কাগজের ফুল’ আটকে আছে। নার্গিস আক্তারের পরিচালনায় ‘যৈবতী কন্যার মন’-ছবির কাজ শেষ মুক্তি পায়নি।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে মুক্তি পেয়েছে ‘সুতপার ঠিকানা’, ‘লাল চর’, ‘মহুয়া সুন্দরী’, ‘লাল সবুজের সুর’, ‘ছিটকিনি’। ড্যানি সিডাক পরিচালিত ‘কাঁসার থালায় রুপালি চাঁদ’ ছবির কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তি পায়নি।

১৪-১৫ সালে অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে ‘ভুবন মাঝি’ ও ‘রীনা ব্রাউন’ মুক্তি পেয়েছে। নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবির শুটিংয়ের কাজ শেষ, এখনো মুক্তি পায়নি। এন রাশেদ চৌধুরী পরিচালিত ‘চন্দ্রাবতী কথা’, মাহমুদ দিদার পরিচালিত ‘বিউটি সার্কাস’ ছবির শুটিং শেষ কিন্তু মুক্তি পায়নি ছবিগুলো।

২০১৫-১৬ অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’, ‘গহিন বালুচর’ ও ‘দেবী’ মুক্তি পেয়েছে। এস ডি রুবেল পরিচালিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ছবির কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তি পায়নি। কামার আহমাদ সাইমনের ‘শঙ্খধ্বনি’ (শিকলবাহা) ছবির শুটিং চলমান।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে ‘নোনাজলের কাব্য’, ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ছবির শুটিং শেষ এখনো মুক্তি পায়নি। ‘আজব সুন্দর, ‘প্রিয় জন্মভূমি’ ‘দায়মুক্তি’ ছবিগুলোর কোনো খবর নেই।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে ‘গোর’, ‘কালবেল, ‘অলাতচক্র’ ছবির শুটিং শেষ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।  ‘কালবেল’, ‘আজব ছেলে’ ও ‘অবলম্বন’ ছবির শুটিং চলছে।

২০১৮-১৯ সালে অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ হোসেন মোবারক রুমীর ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’, হৃদি হকের ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ ছবির শুটিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। মীর সাব্বির পরিচালিত ‘রাতজাগা ফুল’, শমী কায়সার পরিচালিত ‘স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা’ ও আকরাম খান পরিচালিত ‘নকশি কাঁথার জমিন’ সিনেমার শুটিং শুরু হবে বলে জানা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের সরকারি অনুদান পওয়া ছবিগুলো গল্প কাহিনীর ভিক্তিতে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’, গিয়াসউদ্দিন সেলিম ‘কাজল রেখা’, বন্ধন বিশ্বাসের ‘ছায়াবৃক্ষ’, নায়িকা রোজিনা পরিচালিত ‘ফিরে দেখা’, বদরুল আনাম সৌদ ‘শ্যামা কাব্য, তাহেরা ফেরদৌস জেনিফারের ‘আশির্বাদ’, ইফতেখারুল আলমের ‘লেখক’, ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ প্রদীপ ঘোষ, ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘হৃদিতা’, অনম বিশ্বাস ‘ফুটবল ৭১’ পঙ্কজ পালিত ‘একটি না বলা গল্প’, এস এ হক অলিক ‘যোদ্ধা’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র।

সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। ১৯৯৭-৯৮ থেকে ১৯৯৯-২০০০ তিন বছর অনুদান বন্ধ ছিল। ২০০৮ সাল  থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত  অনুদানপ্রাপ্ত ২২ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নয় বছরে মোট ৪১টি চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৫টি ছবি।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক ও চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারি অনুদানের যে অর্থ দেওয়া হয় সেটা তো জনগণের টাকা। অনুদানের সেই টাকাটা নিলে অন্তত ছবিটা বানিয়ে শেষ করা উচিত বলে মনে করি। অনেকেই ছবির কাজ শুরু করে মাঝপথে গিয়ে আর শেষ করতে পারেন না। অনেকেই আবার ছবি শুরুই করেন না অজানা এক কারণে। আগে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হতো সেটা দিয়ে হয়তো ছবি বানানো একটু কঠিন ছিল। অনেকেই সেই কারণে ছবি বানাতে পারেননি। কিন্তু, গত কয়েক বছরে এই সময়ে একটা ছবি নির্মাণ করার  জন্য যতটা অর্থ প্রয়োজন সেটা দেওয়া হচ্ছে। শুনেছি এইবার ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় সুন্দরভাবে একটা ছবি বানানো সম্ভব বলে মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনভাবেই চাই না একজন পরিচালক গ্রেপ্তার হোক। যদি কোন সমস্যা থেকেই থাকে, যদি কিছু করেই থাকে তাহলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা যেতে পারে, আরও অনেক কিছু করার ছিল। পরিচালককে গ্রেপ্তার করে এর সমাধান হয় বলে মনে করি না।’

পরিচালক অনিমেষ আইচ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘কাঁটা’ ছবিতে অভিনয় করেছি আমি। ছবির শুটিং শেষ, যতোদূর জানি এখন শুধু ডাবিং, আবহ সংগীত আর কিছু আনুষঙ্গিক কাজ বাকি। আমার যেটা মনে হয়েছে অনুদানের বাজেট অনুযায়ী ছবির গল্প ঠিক করা উচিত। তা নাহলে এমন অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। আগামীতে যারা অনুদানের জন্য আবেদন করবেন তাদের বিষয়গুলো ভাবা উচিত।’

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

33m ago