এমপি স্টিকার লাগানো গাড়িটির কোনও কাগজপত্র নেই!

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী ফিটনেস সনদ ছাড়া গাড়ি চালানো হলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। গাড়ির ট্যাক্স টোকেন না থাকলে একই আইনে জরিমানা দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী ফিটনেস সনদ ছাড়া গাড়ি চালানো হলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। গাড়ির ট্যাক্স টোকেন না থাকলে একই আইনে জরিমানা দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।

তবে এই আইন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম বা তার ছেলে ইরফান সেলিমের জন্য প্রযোজ্য নয় বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ধানমন্ডিতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে লাঞ্ছিত করার পর রোববার রাতে ইরফানের এসইউভি আটক করে পুলিশ, যার ফিটনেসের সনদ নেই ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে।

পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, গাড়িতে সংসদ সদস্যদের দেওয়া স্টিকার রয়েছে এবং এটি সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়ি।

ঘটনার সময় তার ছেলে ও দেহরক্ষীরা গাড়িতে ছিলেন।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আশফাক রাজিব হাসান বলেন, ‘গাড়িতে একটি এমপি স্টিকার লাগানো ছিল এবং হাজী সেলিমের প্রোটোকল কর্মকর্তা এটি ব্যবহার করছিলেন।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের নথি অনুযায়ী একটি জুতা তৈরির প্রতিষ্ঠান এই গাড়ির মালিক এবং গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করানো হয়নি গত ১০ বছরে।

প্রতি বছর বিআরটিএ-তে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করানো এবং ফিটনেস ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। ফিটনেস ছাড়পত্র ছাড়া যানবাহন ব্যবহার করা সড়ক পরিবহন আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী একটি অপরাধ।

প্রতিটি যানবাহনকে ফিটনেস ছাড়পত্র নেওয়ার সময় রোড ট্যাক্স এবং অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। তবে বিআরটিএ সূত্র জানায়, এই গাড়িটির কোনো ট্যাক্স টোকেন নেই। যা সড়ক পরিবহন আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী অপরাধ।

বিআরটিএর এক কর্মকর্তা জানান, এই গাড়ির মালিককে প্রতি বছর রোড ট্যাক্স সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং এর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করার কথা। সেই সঙ্গে প্রতি বছর অগ্রিম আয়কর হিসাবে ৭৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সে হিসেবে ২০১০ সাল থেকে কাগজপত্র নবায়ন না করায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা গাড়ির মালিক পরিশোধ করেননি।’

২০১২ সাল থেকে রেট্রো-রিফ্লেকটিভ রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট চালু করে, যা ডিজিটাল নম্বর প্লেট হিসেবে পরিচিত। এই নম্বর প্লেট প্রতিটি গাড়ির জন্য বাধ্যতামূলক হলেও জব্দকৃত গাড়িতে তা নেই।

বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বর প্লেট এবং আরএফআইডি ট্যাগ না থাকা আলাদা অপরাধ নয়। তবে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে এই জাতীয় নম্বর প্লেটবিহীন যানবাহনের আরও বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। কারণ, এই নম্বর প্লেট ছাড়া গাড়িগুলো সব ধরণের ছাড়পত্র পায় না।’

বিআরটিএর তথ্য অনুসারে, ল্যান্ড রোভারটি ২০০৪ সালে নিবন্ধিত এবং একটি জুতা তৈরি প্রতিষ্ঠানের নামে এটি রেজিস্ট্রেশন করা।

যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, তারা ২০০৬ সালে গাড়িটি বিক্রি করেছিলেন।

গতকাল সোমবার রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কাছে গাড়ি বিক্রির সব কাগজ আছে। তারপরও বিআরটিএর দলিলে এখনও গাড়ির মালিক হিসেবে আমাদের নাম কেন দেখাচ্ছে সেটা আমি জানি না। এটি আর আমাদের গাড়ি নেই।’

মোটরযান আইন ১৯৮৩ অনুযায়ী, যা গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল, কোনো গাড়ির মালিক গাড়ি বিক্রি করলে বা হস্তান্তর করলে এ বিষয়টি লিখিত ভাবে ১৫ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। একইভাবে অন্য মালিকের কাছ থেকে গাড়ি কেনার পর ক্রেতাকেও এক মাসের মধ্যে এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে।

‘কিন্তু আমার মনে হয় কোনো পক্ষই লিখিতভাবে এই বিষয়টি বিআরটিএকে জানায়নি। জানালে অবশ্যই নথিতে মালিকানা পরিবর্তন হতো।,’ বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক কর্মকর্তা।

সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তার দুটি মোবাইল নম্বরে কল করা হয় দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে একটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপর নম্বরে কল হলেও তা রিসিভ করা হয়নি। এই নম্বরে পাঠানো ম্যাসেজেরও উত্তর দেওয়া হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Further uncertainty over Rooppur plant launch

The construction work for the transmission line through the Padma and Jamuna rivers for the Rooppur nuclear power plant has come to a grinding halt with the ouster of the Awami League government as the Indian contractor has left the site.

9h ago