‘কর্তৃত্ববাদী শাসনে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে ছাত্রনেতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন, ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন ১৯৭১ সালে। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৭ সালের মে মাস থেকে।

[করোনা মহামারির কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি বা কার্যক্রম প্রায় অনুপস্থিত। তাই আমরা এমন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাক্ষাৎকার আপনাদের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি, যারা সরকার নেতৃত্বাধীন জোটে নেই। সাক্ষাৎকারে তারা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন, নিজেদের দলের কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন।

আশা করি বিশ্লেষণমূলক সাক্ষাৎকারগুলো আপনাদের সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ক চিন্তাজগতকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

আজ প্রকাশিত হলো সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলমের সাক্ষাৎকার। এরপর প্রকাশিত হবে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার। -সম্পাদক]

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে ছাত্রনেতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন, ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন ১৯৭১ সালে। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৭ সালের মে মাস থেকে।

রাজনীতি ও দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে মো. শাহ আলমের সঙ্গে। 


দ্য ডেইলি স্টার: সিপিবি-কে নিয়ে একধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। আপনাদের রাজনৈতিক অবস্থান অনেক ক্ষেত্রে পরিস্কার নয়। মানুষের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে আপনারা কীভাবে দেখেন? 

মো. শাহ আলম: আমাদের পার্টি দীর্ঘ ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ বা পাকিস্তান আমলের সংগ্রাম সম্পর্কে আপনারা জানেন। সব মিলিয়ে সিপিবিকে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকার কোনো কারণ নেই। কোন সরকার কখন ক্ষমতায় এলো তার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের পলিসি নির্ধারণ করি না। রাষ্ট্র ক্ষমতায় কোন শ্রেণি আছে, সেই শ্রেণি বিশ্লেষণ থেকে আমরা আমাদের কৌশল ঠিক করি। রাষ্ট্র তো কোনো না কোনো শ্রেণি শাসন করে। সেটা শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব হোক আর লুটেরা বা পুঁজিবাদীদের একনায়কত্ব হোক।

ডেইলি স্টার: এখন যে আওয়ামী লীগ সরকার বা ১৪ দলীয় জোট সরকার পরপর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে, এই সরকার সম্পর্কে আপনাদের মূল্যায়ন কী?

শাহ আলম: শ্রেণিগতভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আমরা তফাৎ দেখি না। 

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে একইভাবে দেখেন?

শাহ আলম: কোনটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আর কোনটা নয়, সেই অবস্থান থেকে বলছি না। সেই অবস্থানে তো পার্থক্য আছেই। আমরা ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জায়গা দেখি। সে জায়গা থেকে বলছি, ৭৫’ পরবর্তী সরকারগুলোর শ্রেণি বিভক্তি এক জায়গায়। আমাদের দেশের শাসকশ্রেণি যারা তারা হলো- লুটেরা ব্যবসায়ী, লুটেরা আমলা এবং লুটেরা রাজনীতিবিদ। এদের একটি বিশাল সার্কেল বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে। এর ফলাফল হলো মুক্তবাজার।

ডেইলি স্টার: এটা তাত্ত্বিক জায়গার বিশ্লেষণ। ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে তা নিয়ে আপনার বা দলের মূল্যায়ন কী?

শাহ আলম: বর্তমান সরকার যা করছে তা হলো, কর্তৃত্ববাদী শাসন। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে। সেটা বিচার বিভাগের কথা বলেন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের কথা বলেন বা সংসদও যেটা চলছে তা দলীয় সংসদের মতো হয়ে গেছে। সংসদ সদস্যরা দলের বাইরে কিছু বলতে পারেন না। অন্য দল না থাকলেও দলের ভেতরেও যদি কথা বলার স্বাধীনতা থাকে তাহলেও তো হয়। সেটাও বন্ধ।



ডেইলি স্টার: সরকার যে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছে সেটা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

শাহ আলম: উন্নয়ন? কার উন্নয়ন? কাদের উন্নয়ন? এক দিকে এই উন্নয়ন শ্রেণি বৈষম্য ও ধন বৈষম্য বাড়াচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি হচ্ছে। তৃতীয়ত, এই উন্নয়ন পরিবেশ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে ফেলছে। আমাদের দেশটা ছোট। এদেশে পানি পথের যাতায়াত বাড়ানো দরকার। এখানে চার লেন, পাঁচ লেন, দশ লেন করে লাভ নেই। ছোট এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে পানি পথ এবং রেলপথে যোগাযোগটা বাড়াতে হবে। সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো।

আমরা যেটা দেখছি, বিদ্যুৎ বলেন বা গ্যাস বলেন, সব জায়গাতেই লুটপাট। 

ডেইলি স্টার: কিন্তু, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরকারের দাবি তো বিরাট সাফল্যের।

শাহ আলম: কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ করে বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিচ্ছে। সরবরাহ না হলেও তারা টাকা পাচ্ছে। বিশাল লুটপাটের জায়গা হয়েছে বিদ্যুৎখাত। 

ডেইলি স্টার: কিন্তু, সরকার মানুষের বিদ্যুত প্রাপ্তি তো নিশ্চিত করেছে।

শাহ আলম: বিদ্যুৎ দিয়েছে, কিন্তু সেটা স্থায়ী করতে হবে তো। দাম তো ন্যায্য এবং সহনশীল হতে হবে। ভুল নীতি এবং লুটপাট হচ্ছে সর্বত্র।

ডেইলি স্টার: রামপাল বা অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেরও তো বিরোধিতা হয়। সরকারের অনেকেই বলেন, তাহলে সরকার করবে কী?

শাহ আলম: নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বাড়ানো দরকার। লুটপাট বন্ধ করা দরকার। 

ডেইলি স্টার: নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ দিয়ে কি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব?

শাহ আলম: সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এটা শুরু করা দরকার। তাহলে আমরা পরিবেশ ও প্রকৃতিও বাঁচাতে পারি। বিভিন্ন দেশ নিজেরা ব্যবহার না করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এখানে ডাম্পিং করছে। আমাদের দেশটাতো আর ডাস্টবিন না। 

ডেইলি স্টার: দুর্নীতির কথা বলছিলেন। সরকারের কথা -উন্নয়ন হচ্ছে, তার সঙ্গে দুর্নীতি হচ্ছে। যখন যে জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগ আসছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাহলে সরকার তো তার অবস্থানে পরিষ্কার।

শাহ আলম: যারা ব্যাংকলুটেরা, তারা টাকা বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এখন ছোট ছোট দুর্নীতিবাজ বা দ্বিতীয় শ্রেণির দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে। ব্যাংকের টাকাগুলো যে বিদেশে পাচার হয়ে গেল, সেখানে তো হাত দিচ্ছে না। ওখানে হাত দিতে গেলে সরকার থাকবে কিনা জানি না। 

ডেইলি স্টার: এত বড় বড় দুর্নীতি যদি হয়ে তাকে, তাহলে জনমানুষ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তো কোনো প্রতিবাদ নেই। সরকার বলছে, যেহেতু আমরা উন্নয়ন করছি, তাই মানুষ আমাদের পক্ষে এবং কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন নেই।

শাহ আলম: বামদের আন্দোলন করার সাংগঠনিক ক্যাপাসিটির ব্যাপার আছে, আন্তরিকতার অভাব নেই।



ডেইলি স্টার: আপনি ইনস্টিটিউশন ধ্বংসের কথা বলছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ এসেছিল। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন নিয়ে কি আপনারা মূল্যায়ন করেছিলেন? কী হয়েছে, কী হওয়া উচিত ছিল বা রাতে ভোটের যে কথা বলা হয়, তা নিয়ে আপনাদের কোনো মূল্যায়ন আছে?

শাহ আলম: এটা তো কোনো ভোটই হয়নি। আগের দিন রাতেই ভোট হয়ে গেছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন বাহিনীর বিভিন্ন আয়োজনে ভোটটা আগের রাতেই হয়ে গেছে। 

ডেইলি স্টার: আগামীতে আবার তো নির্বাচন হবে। সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন কমিশন বা সরকারের যে অবস্থান তাতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা আবার ফিরবে বলে মনে করেন?

শাহ আলম: এর জন্য স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সামগ্রিকভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা ৬৯’ এর গণঅভ্যুত্থান দেখেছি, ৯০’ এর গণআন্দোলন দেখেছি। এই জায়গায় মানুষ যেতে চাচ্ছে, কিন্তু নেতৃত্ব পাচ্ছে না। 

ডেইলি স্টার: নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেখানে আপনারা বাম সংগঠনগুলো কী করছেন? বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে এত বিরোধ কেন? আপনারা একমত না কেন?

শাহ আলম: বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি জায়গায় আমরা একমত, সেটি হলো আমাদের দাবি নিয়ে। কিন্তু, কৌশলের জায়গায় নানা মত আছে। অনেকে বিএনপির সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমরা কিন্তু, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বাইরে বিকল্প কিছু করতে চাই। 

ডেইলি স্টার: আপনাদের প্রতি অভিযোগ আছে, আপনারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেতে চান।

শাহ আলম: না। এই প্রসঙ্গ অবান্তর। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ ৯০’ এর দশক থেকে ইউটার্ন করে গেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। 

ডেইলি স্টার: আমরা কি আগামী দিনে বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ঐক্য দেখব? আপনারা মাঝে মধ্যে ঐক্য করতে যান, কিন্তু সক্ষম হন না।

শাহ আলম: বাম সংগঠনের মধ্যে সিপিবি গোটা বাংলাদেশেই আছে। আগের মতো যে শক্তিশালী আছে, তা নয়। অন্যান্য বাম সংগঠনও কিছুটা আছে, অন্যান্য জায়গায় তাদের সাংগঠনিক ক্যাপাসিটি সেভাবে নেই। সব মিলিয়ে বাম সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। আর সেই সঙ্গে কৌশলগত পার্থক্য তো আছেই। শুধু বামরা তো আর পারবে না, লেফট-ডেমোক্রেটিক একটি বিকল্প তৈরি করতে হবে। লেফট সেক্টেরিয়ানে সিপিবি বিশ্বাস করে না। ডেমোক্রেসির জায়গা আনতে হলে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ একই শ্রেণির মধ্যে, তার বাইরে যারা দৃঢ়ভাবেই অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত তাদের সঙ্গেও আমাদের শ্রেণিগত পার্থক্য আছে। অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে কামাল হোসেন, মান্নারা বিএনপির দিকে চলে গেল। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য না, ডেমোক্রেসির জন্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে নীতিনিষ্ঠ লড়াই করব।



ডেইলি স্টার: দেশে এখন সুশাসনের অবস্থা কী?

শাহ আলম: কিছুই তো নেই।

ডেইলি স্টার: সামাজিক যে ঘটনাগুলো দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিবাদের বিরুদ্ধে আবার এক ধরনের প্রতিবাদ, এগুলো নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?

শাহ আলম: যারা ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু ওপরে বহু কথা বলছে, তাদের প্রতিবাদ টিকবে না। এটা আওয়ামী লীগের সময় আছে, বিএনপির সময়ও ছিল। যারা ধর্ষণের প্রতিবাদ করছে, তাদের ফ্রি ফরওয়ার্ড করার জন্য একটি বৃহত্তর শক্তি দরকার। অনেক সময় অনেক শক্তি দাঁড়িয়ে যায়, আবার সেগুলো মিলিয়ে যায়। মিলিয়ে যাওয়ার কারণ হলো- পাওয়ার গেমের মধ্যে ঢুকে গেলে এই বিষয়টি হারিয়ে যায়। ওভার স্টেপিং করে মূল ইস্যুটাকে পাওয়ার গেমের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। 

ডেইলি স্টার: এই আওয়ামী লীগ সরকার বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলো, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করলো- এই বিচারের ফলে কি এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হলো না যে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে? সেটা কেন হলো না?

শাহ আলম: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো, এটা অত্যন্ত ভালো কাজ। কিন্তু, রাজনীতিতে বাণিজ্য এবং দুর্বৃত্তায়নের যে জায়গা তা মাইনাস না করে আওয়ামী লীগ বলেন আর বিএনপি বলেন, সুশাসন হবে না। 

ডেইলি স্টার: যুদ্ধাপরাধের মতো এত কঠিন কাজ যেহেতু করা গেল এত চ্যালেঞ্জ নিয়ে, তাহলে সুশাসনের অবস্থা এত করুণ কেন বাংলাদেশে?

শাহ আলম: ৭৫’ এর আগে আওয়ামী লীগের যে গণতান্ত্রিক চরিত্র ছিল বা ৮০’র দশকেও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দলটির যে অবস্থান দেখেছি, সেটা তো নেই এখন। লুটেরারা তো কব্জা করে ফেলেছে দলটি। বর্তমান আওয়ামী লীগ নিজেদের খুব শক্তিধর মনে করছে। মাটিতে তাদের পা নেই। পাওয়ার ব্রোকার যারা, তাদের ওপর নির্ভর করে সরকার চলছে। তারা যদি একবার তাদের সমর্থন সরিয়ে নেয়, তখন আওয়ামী লীগ কীভাবে চালাবে? আমরা দেশের স্বার্থে কোনো ধরনের বারগেইনও করতে পারছি না। সরকার যদি জনগণের শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় থাকত, তাহলে সব দিকে ব্যালেন্স করতে পারত, বারগেইন করতে পারত, মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারব।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরে আঞ্চলিক শক্তির খুব প্রবল উপস্থিতি। এক দিকে ভারত এবং অপর দিকে চীন। বাংলাদেশে এই চীন এবং ভারতকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি সেই জায়গাতে সিপিবির অবস্থান কী?

শাহ আলম: ভারত তো বাংলাদেশ থেকে বেশ ভালো রেমিট্যান্স নিয়ে যায়। আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিত।



ডেইলি স্টার: জাতীয় স্বার্থ কী রক্ষা হচ্ছে না?

শাহ আলম: এক্ষেত্রে অনেক অসমতা আছে। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন বিষয় আছে। আমরা দর কষাকষি করতে পারছি না। জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ দেশের স্বার্থ দেখতে পারতো। জনসমর্থনহীন সরকারের পক্ষে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব না। 

ডেইলি স্টার: চীন?

শাহ আলম: চীন এদেশে অনেক বিনিয়োগ করেছে। রাজনৈতিক জায়গায় চীন কতটা হস্তক্ষেপ করছে আমি জানি না। তবে, অর্থনৈতিক জায়গায় তারা শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিয়েছে। এই জায়গায় চীনের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আগের থেকে বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: আপনারা কী এই সম্পর্ক সমর্থন করেন?

শাহ আলম: আমাদের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না করে চীন যদি এই সম্পর্ক চালিয়ে যায় তাহলে খুবই ভালো। 

ডেইলি স্টার: ভারতের ক্ষেত্রে যেমন বললেন আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না, তেমন বিষয় কী চীনের ক্ষেত্রে হচ্ছে না?

শাহ আলম: আছে, কম বেশি আছে। যেসব বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে সেগুলো ট্রান্সপারেন্ট হচ্ছে কিনা, সেগুলোর ভেতরে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা তো ওপেন করছে না সরকার। 

ডেইলি স্টার: আপনারা তো দাবিও জানাচ্ছেন না।

শাহ আলম: দাবি জানাচ্ছি। আমরা তো বলছি, বড় বড় প্রকল্প সংসদেই ওপেন করুক, যদিও সেটা জনগণের ভোট ছাড়া সংসদ। 

ডেইলি স্টার: শেষ প্রশ্ন- করোনাকালে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অর্থনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

শাহ আলম: মানুষ ভালো নেই। করোনায় মানুষের দারিদ্র্যসীমা আরও বেড়ে গেছে। মানুষ বড় কষ্টে আছে, কিন্তু কোনো বিকল্প পাচ্ছে না। 

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম বাড়ছে, তারপরও মানুষ কষ্টে থাকবে কেন?

শাহ আলম: পার ক্যাপিটা ইনকাম কার? এই গড় হিসাব রাখলে হবে? দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের সঙ্গে যদি পাঁচ লাখ টাকা বা ১০ লাখ টাকা আয়ের মানুষের গড় হিসাব করে দেওয়া হয় তাহলেই কি হয় নাকি? ওটা তো শুভঙ্করের ফাঁকি। দেশের মানুষ ভালো নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago