মাটির নিচে নিউক্লিয়ার প্লান্ট গড়ে তুলছে ইরান: আইএইএ

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণুশক্তি বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) পরিদর্শকরা জানিয়েছেন, ইরান মাটির নিচে নিউক্লিয়ার প্লান্ট তৈরি করছে।
রাফায়েল গ্রোসি। ছবি: এপি

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণুশক্তি বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) পরিদর্শকরা জানিয়েছেন, ইরান মাটির নিচে নিউক্লিয়ার প্লান্ট তৈরি করছে।

গত মঙ্গলবার সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি জানান।

তিনি বলেন, ভূ-গর্ভস্থ প্লান্ট নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়াও ইরান স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছে।

তবে, একটি পরমাণু বোমা তৈরিতে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন তা ইরানের হাতে নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আইএইএ প্রধান বলেন, সংস্থাটির পরিদর্শকরা নিশ্চিত করেছেন ইরান মাটির নিচে সেন্ট্রিফিউজ অ্যাসেম্বলি প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে।

গত জুলাইয়ে মধ্য ইরানের ইস্পাহান প্রদেশের নাতানজ অঞ্চলে এ রকম একটি প্লান্ট বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশটি নতুন করে প্লান্ট নির্মাণ কাজে হাত দেয়।

ইরানের অভিযোগ, শত্রুপক্ষের নাশকতামূলক হামলায় সেই প্লান্টটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

নাতানজ পরমাণু প্রকল্পস্থলে বিস্ফোরণের পর তেহরান নতুন অবকাঠামো তৈরি ঘোষণা দিয়ে বলেছিল, এটি হবে আরও নিরাপদ ও মজবুত।

নাতানজের স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো নতুন প্লান্ট তৈরির কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি।

গ্রোসি বলেন, ‘ইরান নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তা এখনো শেষ হয়নি। এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়।’

এ বিষয়ে জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপসাগরীয় দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নাতানজে আছে। ২০০২ সালে স্যাটেলাইট ইমেজে সেই ভূগর্ভস্থ প্লান্টটি দেখা যায়। এ নিয়ে পশ্চিমের দেশগুলো ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

রাজধানী তেহরানের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতানজের এই স্থাপনাসহ অন্যসব পরমাণু স্থাপনায় আইএইএর পরিদর্শকদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইরান।

আইএইএর সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট ইরানের হাতে মজুদ ছিল ২ হাজার ১০৫ দশমিক ৪ কেজি স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তিতে বলা হয়েছিল দেশটি হাতে ২০২ দশমিক ৮ কেজি ইউরেনিয়াম রাখতে পারবে।

এ ছাড়াও, বলা হয়েছিল ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বিশুদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু, এখন তারা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বিশুদ্ধ করছে।

ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ ও বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান গ্রোসি।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, একটি পরমাণু বোমা বানাতে ইরানের প্রয়োজন গ্যাস আকারে থাকা পাঁচ শতাংশের নিচে বিশুদ্ধকৃত প্রায় ১ হাজার ৫০ কেজি স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম যা পরে অস্ত্র বানানোর উপযোগী করে সমৃদ্ধ করতে হবে। অথবা, ৯০ শতাংশের বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম।

আইএইএর পর্যালোচনায় বলা হয়, এই মুহূর্তে ইরানের হাতে ‘পর্যাপ্ত মানসম্মত’ ইউরেনিয়াম নেই যা দিয়ে দেশটি পরমাণু বোমা বানাতে পারে।

ইরান সব সময় বলেছে, তারা পরমাণু বোমা বানাতে আগ্রহী নয়। দেশটি ইউরেনিয়াম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ করেছিল। ২০১৩ সালে ইরানের হাতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধকৃত ৭ হাজার কেজি ইউরেনিয়াম ছিল। তবুও দেশটি পরমাণু বোমা তৈরির পথে হাঁটেনি।

আইএইএর প্রধান বলেন, ‘আমরা এই সমস্যার গঠনমূলক সমাধানের পথে হাঁটছি। ইরানের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। তারা আমাদের পরিদর্শকদের নিয়মিতভাবে পরমাণু স্থাপনাগুলোতে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago