জুয়েলের মরদেহের অপেক্ষায় শোকার্ত পরিবার
লালমনিরহাটের বুড়িমারীর পাটগ্রামে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে নিহত আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েলের পরিবার। তারা এখন শুধু জুয়েলের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছে। ডিএনএ শনাক্তের পর পুলিশ তার মরদেহ হস্তান্তর করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে জুয়েলের ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে তার পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। তখন তাদের এক আত্মীয় সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি দেখে তার পরিবারকে ফোনে জানান।
তার পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করতে পারছেন না ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতোর মতো কিছু করতে পারে নিহত জুয়েল। কারণ জুয়েল একজন ধার্মিক এবং দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।
নিহত জুয়েলের স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, ‘জুয়েল প্রায়ই কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি এতোটাই পরহেজগার ছিলেন যে, তার পক্ষে এ ধরনের কাজ করা অসম্ভব। যারা ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করেছে আমি তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘চাকরি হারানোর পর থেকে জুয়েল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতেন।’
জুয়েলের পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শহীদুন্নবী জুয়েল গত বৃহস্পতিবার সকালে তার মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হন। তিনি দুই সন্তানের জনক। এ ঘটনায় আহত ও চিকিৎসাধীন সুলতান জুবায়ের তার সহযোগী এবং তারা রংপুর জেলা স্কুল থেকে বন্ধু ছিলেন। তার মেয়ে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে এবং ছেলে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী।
জুয়েলের বোন লিপি বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ভাই জানিয়েছিল সে রংপুর শহরে আছে। লালমনিরহাটে যাওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
জুয়েলের ভাইরা আসাদুজ্জামান হাসু বলেন, ‘পবিত্র কোরআন নিয়ে তার ভালো দক্ষতা ছিল। তিনি আরবি থেকে বাংলায় কোরআনের অনুবাদ করতে পারতেন।’
‘তবে, লালমনিরহাটে কী ঘটেছিল তা আমরা বুঝতে পারেনি,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘জুয়েলের মরদেহ ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার এক ভাই মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ নমুনা দিতে সেখানে গেছেন।’
এ ঘটনায় শোকাহত হয়ে পড়েছেন জুয়েলের বন্ধু রুবেল। তিনি বলেন, ‘জুয়েল খুব মেধাবী ছিলো। আমরা ১৯৮৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে একসঙ্গে এসএসসি পাস করি। এ ঘটনায় আহত সুলতান জুবায়েরও আমাদের বন্ধু।’
‘চাকরি হারানোর পর থেকেই তার মানসিক অবস্থা ভালো ছিলো না,’ যোগ করেন রুবেল।
জুয়েলের শালবন বাড়িতে জড়ো হওয়া রুবেল এবং তার আরও কয়েকজন বন্ধু বলেন, আমরা জুয়েলের আরও উন্নত চিকিৎসার পরিকল্পনা করেছিলাম।
জুয়েলকে এভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে রংপুরের পাইরা চত্ত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন তার বন্ধু ও পরিচিতরা।
আরও পড়ুন:
Comments