পদ্মা সেতুর ৫২৫০ মিটার দৃশ্যমান
পদ্মা সেতুর ৩৫তম স্প্যান ‘টু-বি’ পিলারের ওপর বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর পাঁচ হাজার ২৫০ মিটার। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সেতুর আট ও নয় নম্বর পিলারের ওপর আজ শনিবার সফলভাবে স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। ৩৪তম স্প্যান বসানোর সাত দিনের মাথায় এই স্প্যানটি বসানো হলো।
আজ শনিবার দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে স্প্যানটি বসানো হয় বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের।
তিনি জানান, এখন আর ছয়টি স্প্যান বসানো বাকি থাকল। প্রকৌশলীদের লক্ষ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে বসানো হয়ে গেলো চারটি স্প্যান। ছয় হাজার ১৫০ মিটারের সেতুতে স্প্যান বসবে ৪১টি। আর এখন ৬টি স্প্যানে পদ্মা সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান বাকি।
সকালে বৃষ্টিপাত ও পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যান বসানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন প্রকৌশলীরা। তবে, ধীরে ধীরে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় শুরু হয়ে যায় কার্যক্রম। এই স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়ার শিডিউল নির্ধারণ করা হয়েছিল গতকাল। কিন্তু, নির্ধারিত পিলারের কাছে নাব্যতা সংকটের কারণে স্প্যানটি বসানো যায়নি। এক দিন সময় নিয়ে ড্রেজিং করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্র জানিয়েছে, সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার স্প্যানটিকে বহন করে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’। এরপর নির্ধারিত পিলারের কাছে এসে পৌঁছায় সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটের দিকে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে ভাসমান ক্রেনটির সময় লাগে ৩২ মিনিট। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় স্প্যানটি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
পদ্মা সেতুর মূল সেতুর প্রকৌশলী জানান, প্রথমে স্প্যান বহনকারী ভাসমান ক্রেনটি মূল নদীতে নোঙর করে। এরপর দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে পজিশনিং করা হয়। তারপর স্প্যানটিকে ক্রেনের সহায়তায় তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। আর এসব কাজগুলো করতে হয়েছে সতর্কতার সঙ্গে। স্প্যান বসানোর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ঠিকঠাক আছে কি না, নিশ্চিত করা হয়। এখন পাশের ৭-৮ নম্বর পিলারে স্থাপন করা স্প্যানের সঙ্গে ৩৫তম স্প্যানটি ঝালাই করে দেওয়া হবে। যেটি করতে কয়েক দিন সময় লাগবে। স্প্যান বসানোর সময় আশেপাশে দিয়ে যাতে কোনো নৌযান চলাচল না করে, সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
পরবর্তী স্প্যান বসানোর শিডিউল সম্পর্কে জানা যায়, পদ্মা সেতুতে ৫-৬ নভেম্বর দুই ও তিন নম্বর পিলারে ৩৬তম স্প্যান ‘১-বি’, ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর পিলারে ৩৭তম স্প্যান ‘২-সি’, ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর পিলারে ৩৮তম স্প্যান ‘১-এ’, ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারে ৩৯তম স্প্যান ‘২-ডি’, ২ ডিসেম্বর পিলার ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে ৪০তম স্প্যান ‘২-ই’ এবং ১০ ডিসেম্বর সবশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান ‘২-এফ’ বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর।
পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
Comments