নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণ: অভিযোগপত্র দাখিলের তদন্ত শেষ
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অভিযোগপত্র দাখিলের তদন্ত ও প্রমাণের জন্য সব কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে। কিন্তু, সরকারি কর্মকর্তা হলে অনুমোদন নিতে হয়। এ অনুমোদন নিতে যত দেরি হয়। তারপরই আমরা চার্জশিট দাখিল করবো। আমরা এমনভাবে চার্জশিট তৈরি করছি যাতে, ভবিষ্যতে গাফিলতির কারণে এতো মানুষের প্রাণহানি না হয়। এটা যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।’
আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার চাঁদমারী এলাকায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সিআইডির সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় পশ্চিম তল্লা রেললাইন এলাকা থেকে পশ্চিম তল্লা বায়তুল সালাত জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়াকে (৬২) আটক করে সিআইডি।
সিআইডির নারায়ণগঞ্জ বিশেষ পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহম্মেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সিআইডি বাইতুস সালাত জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুল গফুরকে দুই দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেনের আদালতে আসামি জামিন আবেদন করেন। আদালত দুই দিনের রিমান্ডা ও জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।’
তিনি বলেন, ‘আব্দুল গফুর মিয়া ঘটনার আগে থেকেই সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি সভাপতির মতো এত গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদে থেকে গ্যাস লাইনের পাইপ লিকেজ হতে গ্যাস মসজিদে জমা হওয়ার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মুসল্লিদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবেননি। মসজিদে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে, মসজিদের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কোনো সরকারি অনুমোদন গ্রহণ না করে বহুতল ভবনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মুসল্লিদের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে ঝুকিপূর্ণভাবে বিধি বহির্ভূত মসজিদের অভ্যন্তরে মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থানে বিদ্যুতের সার্কিট বেকার, মিটার, কাটআউট ও ম্যানুয়েল চেঞ্জওভার স্থাপন করেছেন। তিতাস, বিদ্যুৎ ও মসজিদ কমিটির অবহেলা, যথাযথ তদারকি, অসাবধানতা ও মসজিদের যাবতীয় কাজকর্মে যথাযথ নিয়ম নীতি অনুসরণ না করার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় তিতাস, ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির দায়িত্বে অবহেলা, অসাবধানতার ও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছি। এজন্য তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডিপিডিসির একজন মিটার রিডিং কালেক্টর, ইলেক্ট্রিশিয়ান ২ জন ও গফুর মিয়াসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মসজিদ কমিটির আরও কয়েকজনের গাফিলতি আমরা পেয়েছি তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টায় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও শিশুসহ ৩৯ জন দগ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, অন্যরা বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছে।’
এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত ভার সিআইডিকে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণ: এবার মসজিদ কমিটির সভাপতি গ্রেপ্তার
Comments