অপহরণ মামলার অপহৃত যুবক আদালতে হাজির, ৩ পুলিশ সদস্যকে তলব

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার একটি অপহরণ মামলার চার বছর পর অপহৃত যুবক নিজেই আদালতে হাজির হওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে পুলিশের তিন জনকে তলব করেছেন আদালত।
রোববার দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌসের আদালতে আইনজীবী আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করলে আদালত এ আদেশ দেন। আদালত পরবর্তী শুনানি ৫ নভেম্বর ধার্য করেছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদ হোসেন সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একটি অপহরণ মামলায় ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিআইডি আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলাটি শুনানির জন্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে বদলী হয়ে আসে। আমরা সেদিন জানতে পারি ভিকটিম মামুন আদালতে উপস্থিত রয়েছেন। তখন আদালত সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তিন জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী তারা ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন। আর আমরা আসামিদের অব্যাহতি চেয়েছিলাম। আজ মামলাটির শুনানির ধার্য তারিখ ছিল। সেই শুনানির প্রেক্ষিতে আদালত তিন জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।’
এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন— ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও এসআই জিয়াউদ্দিন উজ্জ্বল।
মামলার বরাত দিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদ হোসেন সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘২০১৪ সালের ১০ মে চাঁদপুরের মতলবে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন মামুন (২৮)। মামুন ফতুল্লা থেকে অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ছয় জনকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল।
আসামিরা হলেন— চাঁদপুরের মতলব থানা শাখারীপাড় এলাকার রকমত আলীর মেয়ে তাসলিমা খাতুন (২৬), তার বাবা রকমত আলী (৬০), ভাই রফিক (২৮), সাগর (২৮), খালাতো ভাই সাত্তার মোল্লা (৪৩) ও সোহেল (৩১)। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত ছয় জনকেই গ্রেপ্তার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রিমান্ডে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে সবাইকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কেউ জবানবন্দি দেননি।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার এস আই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামীদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, ‘খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে।’
পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তে পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডি সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। এতে এজাহারভুক্ত ছয় জনকেই অভিযুক্ত করা হয়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ১০ মে খালাতো বোন তাসলিমাকে দিয়ে কৌশলে মামুনকে বাড়ি ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে মামনুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাসলিমা। কিন্তু বিয়েতে রাজী না হওয়াতে বিবাদী ছয় জন মিলে মামুনকে কোমল পানির সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সিএনজি চালিতা অটো রিকশা করে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায় কিভাবে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।’
Comments