আমেরিকার নির্বাচন ২০২০

‘ভীতি ও হুমকি’র পরিবেশে ট্রাম্প-বাইডেনের ভাগ্য নির্ধারণ

আমেরিকার নির্বাচন মঙ্গলবার। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্টসহ কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবকটি, ৩৩টি সিনেট আসন ও ১১টি স্টেটের গভর্নর পদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন জনগণ। এর বাইরেও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদের জন্য নির্বাচন হবে। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছরের ও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিদের মেয়াদ দুই বছর হলেও সিনেট সদস্যদের মেয়াদ ছয় বছর।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন।

আমেরিকার নির্বাচন মঙ্গলবার। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্টসহ কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবকটি, ৩৩টি সিনেট আসন ও ১১টি স্টেটের গভর্নর পদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন জনগণ। এর বাইরেও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদের জন্য নির্বাচন হবে। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছরের ও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিদের মেয়াদ দুই বছর হলেও সিনেট সদস্যদের মেয়াদ ছয় বছর।

সম্ভবত এই প্রথম আমেরিকায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে নানা ভীতি ও হুমকির মধ্যে। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার সমর্থক ও কর্মীদের উসকে দিয়েছেন তারা যেন ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়। কেন পাহারা দেবে? তিনি কোনো যুক্তি, তথ্য ও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও বারবার বলে আসছেন ডেমোক্রেটরা ভোট কারচুপি করবে। অথচ আমেরিকার নির্বাচন অফিসগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং ডেমোক্রেটরা নির্বাচন অফিস কিংবা বর্তমান প্রশাসনের অংশ নয়। গোয়েবলসিও কায়দায় তিনি এইভাবে বারবার একটি মিথ্যাকে উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন।

নির্বাচন নিয়ে ভীতির আরেকটি কারণ, গত এক মাসে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে অস্ত্র বিক্রি বেড়ে গেছে। এদেশে অস্ত্র রাখা এবং বহন করা সাংবিধানিক অধিকার। ডেমোক্রেটারা এই বিষয়টি সীমিত করার পক্ষে হলেও রিপাবলিকানরা তা বিস্তৃত করতে চায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে অস্ত্রের মহড়া হয়ে গেছে কয়েক দফা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই মহড়ার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে অস্ত্র মহড়ার ভয়াবহতা।

নির্বাচনের এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের পরের দিন কোনো ভোট গণনা করা যাবে না। এর আগে প্রতিটি নির্বাচনেই ডাকযোগে পাঠানো ভোটগুলো নির্বাচনের পরে গণনা সম্পন্ন করে যোগ করা হয়। এইসব ভোট গণনা শেষেই সরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানেন, এ বছর বিপুল সংখ্যক ডেমোক্রেট ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। সেগুলো যোগ করলে তার জন্য সুসংবাদ নয়, বরং চরম দুঃসংবাদ আসতে পারে। সে কারণেই এই হুমকি দিয়ে রেখেছেন। বিষয়টি আদালতে গড়াবে নিশ্চিত।

নির্বাচনের আগের দিন সোমবার ম্যানহাটানের বিশ্ববিখ্যাত ডিপার্টমেন্ট স্টোরসহ প্রধান প্রধান সড়কে অবস্থিত অন্যান্য স্টোরের সামনের গ্লাস উইন্ডো প্লাইউড দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কারণ সকলেই আশঙ্কা করছেন নির্বাচন ও ফলাফলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হবে। আর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এইসব স্টোর মালিকরা আশঙ্কা করছেন সংঘর্ষ কিংবা র‌্যালিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত লুটপাটে মত্ত হয়ে উঠতে পারে। শুধু নিউইয়র্কে নয়, বড় বড় শহরগুলোতে একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো কোনো বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর কিংবা ভবন মালিকরা অতিরিক্ত প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন করেছেন।

আরেকটি ঘটনাও সকলের চোখ কপালে তুলেছে! প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ভয়ে এই প্রথম হোয়াইট হাউসের তিন দিক শক্ত লোহার জালি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার আলামত যত স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্প সমর্থকরা ততই মারমুখী হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে নিউইয়র্কে তারা কয়েকটি শোডাউন করেছে। এই আশঙ্কার কারণেই অধিকাংশ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। আগে কখনোই নির্বাচনের দিনটি এমনভাবে ‘রেড-ডে’ হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। অনেকেই আজ যাতে কাজে যেতে না হয়, তার জন্যে আগেভাগে ছুটি নিয়েছেন।

অন্যান্য বছর নির্বাচনে যিনি জয়ী হবেন বলে পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তিনি বিশাল বিজয় পার্টির আয়োজন করেন। বারাক ওবামার এই বিজয় পার্টি হয়েছিল মধ্যরাতে শিকাগোর একটি স্টেডিয়ামে। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন আয়োজন করেছিলেন সুবিশাল জেভিটস কনভেনশন সেন্টারে (যদিও হাজারো সমর্থক সমবেত হওয়ার পর বিফল মনোরথে ফিরে যান)। এ বছর ফলাফল নিয়ে দ্বিধা ও সংশয়ের কারণে বিজয় পার্টি নিয়ে দুই প্রার্থীই সিদ্ধান্তহীনতায়। এখানকার ধারা অনুসারে বিজয় পার্টির আগে পরাজিত প্রার্থীকে ফলাফল মেনে নিতে হয়। ট্রাম্প পরাজয় মেনে নেবেন না— সে কথা এখন গোপন কোনো তথ্য নয়। যদিও ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন নির্বাচন-উত্তর পার্টি হবে তার নিজস্ব ডিসি হোটেলে। তিনি বিজয় পার্টি বলেননি। নিউইয়র্কে ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৬টায়। চলবে একটানা রাত ৯টা পর্যন্ত।

পাদটীকা: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে সংবিধান পড়েননি, সে কথা ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক কনভেনশনে খিজির খান উচ্চারণ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নির্বাচনী সভায় বলেন, তিনি পুনঃনির্বাচিত হলে ডা. অ্যান্থনি ফাউসিকে চাকরিচ্যুত করবেন। আমেরিকার ডাকসাইটে সাংবাদিকরা এই কথা শুনেই জানিয়ে দিলেন, ফেডারেল আইনে আছে কোনো ফেডারেল সিভিল সার্ভেন্টকে চাকরিচ্যুত করার এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের নেই।

আরও পড়ুন:

ট্রাম্প ‘আম-ছালা’ দুটোই হারাবেন

‘নারীদের ভোটেই নির্ধারিত হয় কে যাবেন হোয়াইট হাউসে’

‘এগিয়ে থাকার আভাস পেলেই নিজেকে জয়ী ঘোষণার পরিকল্পনা ট্রাম্পের’

কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটকেন্দ্রে আনতে মরিয়া বাইডেন-কমলা

হোয়াইট হাউসে উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত ট্রাম্প-বাইডেন

বাইডেনের জয়ের আশায় চাঙা হচ্ছে ইরানের মুদ্রা

গুরুত্বপূর্ণ ২ রাজ্যে এগিয়ে বাইডেন: সিএনএন জরিপ

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago