ফেসবুকে সিআইডিকে নিয়ে গুজব, গ্রেপ্তার ১
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নিয়ে গুজব রটানোর অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির একটি দল।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম নিরঞ্জন বড়াল (৫০)। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদরের শ্ৰীমন্তকাঠিতে। বর্তমানে তিনি বনশ্রীতে থাকেন।
আজ মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয় বলে সিআইডি থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করাকালীন গত ৩১ অক্টোবর সকালে সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম দেখতে পায় যে, ফেসবুকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে সিআইডির মালিবাগ অফিসের চারতলা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার’ শীর্ষক একটি সংবাদ পোস্ট ও শেয়ার করা হয়। এই সংবাদটি দ্রুত বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজে ভাইরাল করা হয়। যা একটি সম্পূর্ণ অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সংবাদ। এই ধরনের সংবাদ বা তথ্য শেয়ার-পোস্ট করার মাধ্যমে সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি বা সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
এই মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদটি যেসব ফেসবুক আইডি-পেজ থেকে পোস্ট-শেয়ার করা হয়, সেসব আইডি-পেজগুলো শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য যৌথভাবে কাজ শুরু করে সিআইডির সাইবার মনিটরিং ও সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস টিম। সিআইডির সাইবার মনিটরিং ও সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস টিম দেখতে পায় যে, ‘নিরঞ্জন বড়াল’ নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে এই ধরনের একটি তথ্য পোস্ট করা হয়। গত ৩১ অক্টোবর ‘মালিবাগ সিআইডি অফিসের চারতলা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তিথি সরকার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার। আমি হতবাগ!’ শীর্ষক পোস্টটি উক্ত ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারী তার নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। যা বিভিন্ন ফেসবুক আইডি-গ্রুপ-পেজে দ্রুত শেয়ার ও ভাইরাল করা হয়। ‘নিরঞ্জন বড়াল’ নামক ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করার জন্য নিরলসভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণের এক পর্যায়ে সাইবার টিম জানতে পারে যে, রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী থেকে ওই ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারী তার ফেসবুক আইডিটি পরিচালনা করছেন।
পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে সিআইডির সাইবার পুলিশের একটি দল নিরঞ্জন বড়ালকে বনশ্রী থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকালীন অভিযুক্তের কাছ থেকে ‘নিরঞ্জন বড়াল’ নামক ফেসবুক আইডি ও সংশ্লিষ্ট ডিভাইসটি উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিরঞ্জন বড়ালের ফেসবুক আইডি বিশ্লেষণ করে সিআইডি জানিয়েছে, তিনি তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী তথ্য ও সংবাদ পোস্ট-শেয়ার করে আসছেন। এই ধরনের অসত্য, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ বা তথ্য নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করার মাধ্যমে নিরঞ্জন বড়াল সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত থেকেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেছে, এইভাবে অসত্য, মিথ্যা ও বিভান্তিকর সংবাদ ও তথ্য পোস্ট-শেয়ার করা ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত বা উসকানি দেওয়ার অভিপ্রায়ের সমতুল্য। এভাবে মিথ্যা তথ্য ও সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার করার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পর্কে চরম নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ফেসবুক আইডি, গ্রুপ ও পেজগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
যেকোনো প্রকার তথ্য ও সংবাদ সঠিকভাবে যাচাই ছাড়া বিশ্বাস না করতে সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সিআইডির সাইবার পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশ।
Comments