‘এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়ে শাহীন আখতারের প্রতিক্রিয়া

‘অপ্রত্যাশিত, বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি’

শাহীন আখতার ও তার উপন্যাস ‘তালাশ’।

নব্বই দশকের অন্যতম কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার তার ‘তালাশ’ উপন্যাসের জন্য এ বছর ‘এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত তালাশ উপন্যাসের বিষয়বস্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখো বাঙালি নারীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন তথা মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাক্রান্ত মানুষ। কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের শেষ দিন এ পুরস্কার ঘোষিত হয়।

তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত ফেস্টিভ্যালের অন্যতম বিষয় ছিল ‘এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান। পুরস্কারটি দেওয়া হয় এশিয়ান লেখকদের, যারা দেশীয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন। ২০১৭ সালে চালু হওয়া পুরস্কারটি প্রথম পেয়েছিলেন মঙ্গোলিয়ার কবি মি. ইউরিয়ানখাই ডামডিনসুরেন। দ্বিতীয়বার পান ভিয়েতনামের লেখক মি. বাউ নিন। এবার পেলেন বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

অ্যাওয়ার্ড কমিটির কিম নামিল প্রশংসা করে বলেন, ‘তালাশ উপন্যাসে সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদ, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ও নারীর প্রতি সহিংসতা, যুদ্ধাপরাধীদের প্রতারণা, স্বাধীনতায় সংগ্রামীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং ধর্ষণের শিকার নারীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ— সবই আখ্যানে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত। তুলে ধরেছেন নারীদের অব্যক্ত কথা, প্রান্তিক মানুষের আড়ালে থাকা গল্প।;

বিচারকরা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে উপন্যাসটি এই সময়ের এশীয় লেখকের অন্যতম সেরা নারীবাদী ও যুদ্ধবিরোধী ডকু-উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার। আমাদের সময়ের নিদারুণ যন্ত্রণা ও অসামান্য সাহসের দলিল।

পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শাহীন আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই পুরস্কার খুব অপ্রত্যাশিত। আমি কখনো ভাবিনি বাংলায় লিখে রিজিওনাল প্রাইজ পাব। খুশি তো নিশ্চয় হয়েছি। কিন্তু, বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি।’

‘তা ছাড়া, “তালাশ”র কোরিয়ান অনুবাদ কেমন হয়েছে— সেটা জানার সাধ্য নেই আমার। ভাষাটা জানি না যেহেতু। কিন্তু, বইটা কোরিয়ার পাঠক-সমালোচকের মধ্যে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে অনুবাদ নিশ্চয় ভালো হয়েছে। তারপর প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারটা যেহেতু তারা কোরীয় ভাষার বইটাকে দিয়েছে, আমরা আশা করতে পারি বইটা উচ্চমানের অনুবাদ হয়েছে’, বলেন তিনি।

২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘তালাশ’ উপন্যাসটি ২০১১ সালে ‘দ্য সার্চ’ নামে ইংরেজি অনুবাদ করে দিল্লির প্রকাশনা হাউস জুবান। ‘তালাশ’ কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক সিং হি জন। বইটি কোরিয়া থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর পাকিস্তান বাহিনীরা যে অমানবিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে, তারই লোমহর্ষক বর্ণনা শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন লেখিকা। মরিয়ম, টুকিসহ নানান চরিত্রগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার অসামান্য লেখনীর গুণে। লেখকের ভাষ্য অনুসারে, যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। বয়স অল্প হলেও সে সময়ের কিছু স্মৃতি তার মানসপটে গেঁথে গেছে।

১৯৬২ সালে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার হারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহীন আখতার। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা অর্থনীতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

20m ago