৫৩ উজি পিস্তল ব্যবহারকারীর সন্ধানে গোয়েন্দারা

কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে দেশে আমদানি করা সামরিক গ্রেডের আধা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র উজি পিস্তলের মালিকদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছেন গোয়েন্দারা।

কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে দেশে আমদানি করা সামরিক গ্রেডের আধা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র উজি পিস্তলের মালিকদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছেন গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ইতোমধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রধারীদের একটি তালিকা পেয়েছে, যারা দেশের ছয় অনুমোদিত অস্ত্রের ডিলারের থেকে ৫৩টি অস্ত্র কিনেছিলেন। ডিলাররা গত পাঁচ বছরে ১১১টি উজি পিস্তল আমদানি করেছেন।

গোয়েন্দারা জানান, দেশে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আধা স্বয়ংক্রিয় ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারীরা উভয়েই আমদানির কাগজপত্রে সেগুলোকে ‘রাইফেল’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। প্রতিটি উজি চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল।

এক ধরণের রাইফেল বা পিস্তল হলেও ‘উজি পিস্তল’ দেখতে অনেকটা সাব-মেশিনগানের মতো। উজি পিস্তলের ম্যাগাজিনে ২০টি গুলি থাকতে পারে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত পিস্তলে ১৫টি গুলি বহন করা যায় বলে জানান গোয়েন্দারা।

তারা বলছিলেন যে, এ জাতীয় অত্যাধুনিক অস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে গেলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। যারা এসব অস্ত্র কিনেছেন, গোয়েন্দারা এবার তাদের সামাজিক অবস্থানসহ সম্ভাব্য সব বিষয়ের খোঁজ নিচ্ছেন।

গত ২০ আগস্ট রাজধানীতে মিনাল শরীফ নামের এক মাদক চোরাকারবারির কাছ থেকে একটি উজি পিস্তল উদ্ধারের পর থেকে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সেসময় তারা জানতে পারেন, রাইফেলের লাইসেন্স দেখিয়ে পিস্তলটি কেনা হয়েছিল।

ডিবির উপকমিশনার (তেজগাঁও) গোলাম মোস্তফা রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অস্ত্রধারীদের তালিকা পাওয়ার পর তারা সেটি নিয়ে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন সংশ্লিষ্ট থানায় ক্রেতাদের সামাজিক অবস্থান, ঠিকানাসহ অন্যান্য বিষয় জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি। আমরা তথ্যসহ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি।’

‘আমরা দেখেছি যে, একটি শক্তিশালী অস্ত্র মাদক চোরাকারবারিদের হাতে পৌঁছেছে। এটি কীভাবে হয়েছে তা আমরা জানতে চাই ... এমনটি যাতে আর না ঘটে আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই’, যোগ করেন তিনি।

সব তথ্য পাওয়ার পর গোয়েন্দারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবে।

এই সংবাদদাতার সঙ্গে আলাপকালে পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, ‘উজি পিস্তল’ কীভাবে শিথিল পর্যবেক্ষণ মধ্য দিয়ে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এ দেশে প্রবেশ করেছে, তা জানিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তর ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

সেই প্রতিবেদনে ‘এসব আগ্নেয়াস্ত্র জঙ্গি বা কোনো অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছলে তা বিপজ্জনক হতে পারে’ উল্লেখ করে তাত্ক্ষণিকভাবে সব আমদানিকৃত ‘উজি পিস্তল’ জব্দ করে সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হস্তান্তরের পরামর্শ দেয় ডিএমপি।

‘শুল্ক ও জেলা কমিশনার অফিসে অস্ত্র বিশেষজ্ঞ না থাকায় অস্ত্র আমদানিতে অনিয়ম হয়েছিল’ উল্লেখ করে কাস্টমস হাউজে যেকোনো অস্ত্রের চালান খালাসের সময় অস্ত্র বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি জরুরি বলেও পুলিশের প্রতিবেদনে প্রস্তাব করা হয়।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

আরও পড়ুন:

রাইফেলের নামে সামরিক মানের অস্ত্র আমদানি, উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi migrant workers in gulf countries

Can we break the cycle of migrant exploitation?

There has been a silent consensus on turning a blind eye to rights abuses of our migrant workers.

8h ago