ট্রাম্পের বিলম্বিত ক্ষমতা হস্তান্তর জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি

নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব ও বাধা সৃষ্টি করতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ছবি: এপি ফাইল ফটো

নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব ও বাধা সৃষ্টি করতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অতীতে দেখা গেছে— এসব প্রতিবন্ধকতার ফল ভালো হয় না। ২০০০ সালের নির্বাচনে জর্জ বুশের সময় ক্ষমতা হস্তান্তরে দেরি হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা দল গঠনে দেরি হয়েছিল। এর ফলে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইট টাওয়ার ধ্বংসের মতো বিপর্যয় হয়েছিল বলে দেশটির সরকারি কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

অলাভজনক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিসের পরিচালক ম্যাক্স স্টিয়ার এক সাক্ষাৎকারে সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জটিল একটি ব্যবস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা।

দেশটির প্রেসিডেন্টকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট অনুমোদন দিতে হয়। সেনা সদস্যসহ প্রায় ৪০ লাখ মানুষের খরচ নিয়ে তাকে ভাবতে হয়। ভাবতে হয় দেশের ১০০র বেশি সংস্থাকে নিয়ে। তিনি নিজেও প্রায় ৪ হাজার রাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সামাল দিতে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অনেক কাজ করতে হয়। তাই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নির্বাচনের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়।

সেই বিবেচনায় বাইডেনের লোকজন ক্ষমতা হস্তান্তর পরিকল্পনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। আইন অনুযায়ী তারা জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিএসএ) সঙ্গেও কাজ করছেন।

ম্যাক্স স্টিয়ার মনে করেন, ক্ষমতা হস্তান্তরে দেরি হলে জাতীয় ও জননিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, কে প্রেসিডেন্ট হবেন তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু, যিনিই প্রেসিডেন্ট হন না কেন তাকে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

নাইন ইলেভেন কমিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কয়েকদিন দেরি হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা দল গঠনে দেরি হয়েছিল। এর ফল জাতি পেয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

ক্ষমতা হস্তান্তরে দেরি হলে দেশের ও দেশবাসীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে মনে করেন এই প্রশাসন বিশেষজ্ঞ। তার মতে, নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনীতিও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।

ক্ষমতা হস্তান্তরে দেরি হওয়ার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিসের পরিচালক। তিনি বলেন, প্রথম কারণ হচ্ছে: প্রেসিডেন্টকে যেহেতু ১০০র বেশি সংস্থাকে নিয়ে ভাবতে হয়, তাই বাইডেন প্রশাসনের লোকদেরও সেসব সংস্থা দিয়ে ভাবতে হবে। প্রতিটি সংস্থার সমস্যা ভিন্ন। তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করে তা তাদেরকে ভালোভাবে বুঝতে হবে রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে।

জিএসএ বাইডেনের লোকদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঢোকার অনুমতি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই সংস্থাটির সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।

দ্বিতীয় বড় কারণটি হলো: প্রেসিডেন্টকে প্রায় ৪ হাজার রাজনৈতিক নিয়োগ দিতে হবে। তাদের মধ্যে ১২শ নিয়োগ আসবে সিনেটের অনুমতি নিয়ে। তাদের নিরাপত্তা ও আর্থিক বিষয়ে অফিস অব গভর্নমেন্ট এথিকসের অনুমতি প্রয়োজন। আর জিএসএ’র সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব কোনো কিছুই হতে পারবে না।

ম্যাক্স স্টিয়ার মনে করেন তৃতীয় কারণটি হচ্ছে অর্থনৈতিক। যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের বেতন-ভাতা কিভাবে পরিশোধ করা হবে তা নিয়ে কাজ করছে বাইডেনের দল। তারা সরকারি অর্থের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। তবে তা তাদের জন্যে অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেন ম্যাক্স স্টিয়ার। বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রতিদিনই ব্রিফ করার কথা। রাষ্ট্রের অনেক গোপন বিষয় ও কর্মপন্থা তিনি তার উত্তরসূরীকে বলবেন। কিন্তু, এসব কিছুই আটকে রয়েছে।

তিনি জানান, প্রশাসন ব্যবস্থায় ঢোকা ছাড়া আর সব প্রস্তুতিই নিচ্ছেন বাইডেনের লোকেরা। তারা এভাবে কতদিন চলতে পারবেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে আগামী ২০ জানুয়ারির পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় নতুন প্রেসিডেন্টকে বসতে হবে। এটাই সংবিধানে বলা রয়েছে।

ম্যাক্স স্টিয়ারের মতে, ট্রাম্প যদি নির্বাচনের ফল উল্টে দিয়ে আবার ক্ষমতায় বসেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করা। রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশের জনগণের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এখন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা প্রতিটি আমেরিকানের জন্যে উদ্বেগের বিষয়।

আরও পড়ুন:

ট্রাম্পের পরাজয় মেনে না নেওয়াটা ‘বিব্রতকর’: বাইডেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সরিয়ে অনুগতদের বসাচ্ছেন ট্রাম্প

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago