এমএন লারমার ৩৭তম প্রয়াণ দিবসে আলোচনা সভা

পাহাড়ে নারীদের ঘরের বাইরে এনেছিলেন এমএন লারমা

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের ঘরের বাইরে এনে উৎপাদনমুখী কাজে যুক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল জনসংহতি সমিতর প্রতিষ্ঠাতা নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার। তবে তার ভাবনা শুধু পাহাড়ের নারীদের মুক্তি নিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি সমগ্র দেশের নারী মুক্তির কথা ভেবেছেন।

এমএন লারমার ৩৭তম প্রয়াণ দিবসে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের যৌথ আয়োজনে ‘নারী মুক্তি প্রসঙ্গে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনায় তার এই অবদানের কথা উঠে আসে।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সঞ্চালনা এবং সভাপতিত্বে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন ড. কাবেরী গায়েন, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী এমএন লারমার নারী মুক্তি ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

শুরুতে আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. ঈশানী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এমএন লারমা শুধু পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর নারীদের মুক্তি নিয়েই ভাবেননি। তিনি সমগ্র দেশের নারী মুক্তির কথা ভেবেছেন। আজ পাহাড়ের যে নারীরা ঘরের বাইরে বিভিন্ন কাজ করছেন, সংগঠন করছেন, নিজেদের অস্তিত্বের টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত আন্দোলন করছেন এর সবটুকু অবদান এমএন লারমার।

নারী শিক্ষা বিস্তার এবং মহিলা সমিতি গঠনে এমএন লারমার অবদানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

চঞ্চনা চাকমা বলেন, সমাজে অর্ধেক অংশ নারীরা যদি অন্ধকারে থাকে তাহলে সে সমাজ কখনও সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এমএন লারমা নারী মুক্তি সম্পর্কে বলতেন, নারী অধিকার মানেই মানবাধিকার।

ড. কাবেরী গায়েন বলেন, সকল সমাজেই নারী তার সর্বস্ব দিয়ে কাজ করেন, তবুও সকল ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এমএন লারমা এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজস্ব জাতিসত্তা থেকে শুরু করে কাপ্তাই বাঁধ, সমাজের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, নারীশিক্ষা, নারী মুক্তি তথা নারী অধিকার এমনকি খসড়া সংবিধান নিয়েও গর্জে উঠেছেন। তিনি সব শ্রেণি, মানুষের সংবিধান ও সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শান্তিচুক্তি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনও পাহাড়ে জাতিগত নিপীড়ন থামেনি। সকল জাতিসত্তার পূর্ণ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাহাড়ে নারী নির্যাতন কমেনি বরং সহিংসতার মাত্রা দীর্ঘায়িত হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, এমএন লারমা শুধু পাহাড়ি নারীদের কথাই বলেননি, সমগ্র দেশের নারীদের কথা বলেছেন। মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠায় এমএন লারমার অবদান অনস্বীকার্য।

দেশে নারী নিপীড়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু আইন প্রণয়ন, আইন সংশোধন করলেই হবে না আইন প্রয়োগ এবং জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এর জন্য শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago