বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের নতুন আদেশ
বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন আদেশ, ২০২০ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ আদেশ দ্বারা এ সংক্রান্ত ২০০৫ সালের আদেশ রহিত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ রোববার একথা জানিয়ে বলা হয়, নতুন আদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.molwa.gov.bd) প্রকাশিত প্রমাণকের যেকোনো একটিতে নাম থাকতে হবে। প্রমাণকগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর) এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী)। লাল মুক্তিবার্তার মধ্যে রয়েছে লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই), লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা।
গেজেটের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, বেসামরিক গেজেট, প্রবাসে বিশ্বজনমত গেজেট, ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) গেজেট, শব্দ সৈনিক— স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলা-কুশলীদের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের (বীরাঙ্গনা) তালিকা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের তালিকা, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা।
এ ছাড়াও, রয়েছে বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট, মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের তালিকা, মুজিবনগর কর্মচারী তালিকা এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত অন্য কোনো নামীয় তালিকা সংক্রান্ত গেজেট।
বাহিনী গেজেটের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাহত সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা, যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) গেজেট, সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের নামীয় তালিকা, বিমান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, নৌ-কমান্ডোদের তালিকা, বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) মুক্তিযোদ্ধাদের নামীয় তালিকা, পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা।
আদেশে বলা হয়েছে, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানাতে হবে। ঢাকায় অবস্থানরত খেতাবপ্রাপ্ত বা যুদ্ধাহত কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আত্মীয়-স্বজন বা কোনো নাগরিক প্রশাসনকে অবহিত করতে পারবেন। এমনকি সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলেও যাচাই করে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মহানগর ও জেলা সদরে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন। রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের নিয়ম সর্ম্পকে বলা হয়েছে, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন জাতীয় পতাকা দ্বারা আবৃত করতে হবে। তবে, সৎকার বা সমাধিস্থ করার পূর্বে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলতে হবে। সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধি কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুমোদিত সংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের দ্বারা সশস্ত্র সালাম প্রদান করতে হবে এবং বিউগলে করুণ সুর বাজাতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গার্ড অব অনার পরিচালনা করবেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে থাকতে না পারলে থানার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে উক্ত বাহিনীর নিজস্ব রীতি অনুসরণ করতে হবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী এবং ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী সৎকার বা সমাধিস্থ করতে হবে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
Comments