মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বাইডেনের পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেনকে মধ্যপ্রাচ্যের এমন সব সংঘাত সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় বসতে হবে যেগুলোর মুখোমুখি তিনি দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় হয়েছিলেন।
Joe Biden
জো বাইডেন। রয়টার্স ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেনকে মধ্যপ্রাচ্যের এমন সব সংঘাত সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় বসতে হবে যেগুলোর মুখোমুখি তিনি দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় হয়েছিলেন।

তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সব সংঘাত মিটিয়ে ফেলার আশ্বাস দিয়েছিলেন ক্ষমতায় যাওয়া আগে। কিন্তু, তার শাসনামলে কোনো সংঘাতই শেষ হয়নি।

সম্প্রতি সৌদি আরবভিত্তিক আল আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কমলা হ্যারিসকে যু্ক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদেরকে অগ্রাধিকার ঠিক করে নিতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারির বিস্তার রোধ ও মহামারির কারণে দেশটির বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সবল করতেই বাইডেন-কমলার অধিকাংশ সময় কেটে যাবে।

নির্বাচনের আগে কমলা বলেছিলেন যে তিনি ও বাইডেন দেশের ভেতরে বিদ্যমান জাতিগত বৈষম্য, বিশেষ করে আরব-আমেরিকানদের লক্ষ্য করে যে বৈষম্যমূলক নীতি নেওয়া হয়েছে তা দূর করতে কাজ করবেন।

বাইডেনও প্রতীজ্ঞা করে বলেছিলেন যে তিনি তার প্রশাসনে মুসলিম-আমেরিকানদের নিয়োগ দিবেন।

তারা দুই জনেই ট্রাম্পের দেওয়া কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

নির্বাচনের আগে সংবাদমাধ্যম আরব আমেরিকান নিউজকে কমলা বলেছিলেন, একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বিশ্ব গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে।

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক টিমের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল আরাবিয়াকে বলেছেন, ‘বাইডেন ও তার টিম মধ্যপ্রাচ্যের নানাবিধ সমস্যাগুলোকে ভাগ করে নিবেন। তারপর তারা সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যাচাই-বাছাই করে দেখবেন।’

এগুলোর মধ্যে রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চল, সিরিয়া, লেবানন ও অন্যান্য দেশ।

তিনি আরও বলেন, ‘বাইডেন বলেছেন— মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

এর ফলে, কোনো কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। আবার কোনো কোনো দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হতে পারে বলেও মনে করেন এই উপদেষ্টা।

তার মতে, এই অঞ্চলে সাময়িক সুবিধা পাওয়ার জন্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্কের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত ভারসাম্য রক্ষার নীতি গ্রহণ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন।

উপসাগরীয় অঞ্চল

উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে বাইডেনের ডেমোক্রেটিক দলেও বিভেদ রয়েছে।

এমনকি, এ বিষয়ে প্রগতিশীল কমলা ও মধ্যপন্থি বাইডেনের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে। তাদের নির্বাচনী প্রচারণাতেও সেই বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

সে সময় কমলা সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে যেসব আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিলেও বাইডেন তা দেননি।

বাইডেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন আল আরাবিয়াকে বলেন যে বাইডেন মনে করেন সৌদি আরব ও আমিরাত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে চাপ আসতে পারে। তবে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে সৌদি আরব ও আমিরাত তাদের আগ্রহের কথা ইতোমধ্যে কয়েকবার বলেছে।

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক টিমের সেই জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে ভিন্ন, তবে গঠনমূলক সম্পর্ক থাকবে। ইচ্ছা করলেই তাদের কাছ থেকে সরে যাওয়া যাবে না।’

ইরান

ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভবত ইরানই হবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল আগ্রহের জায়গা। পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার বিষয়ে বাইডেন কোনো রাখঢাক করেননি। তিনি ইরানকেও কঠোরভাবে চুক্তি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

শুধুমাত্র পরমাণু চুক্তি নিয়েই যে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হবে তা নয়। বাইডেনের উপদেষ্টার মতে, আলোচনায় আরও থাকবে ইরানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন বন্ধের বিষয়ও।

ট্রাম্প ইরানের ওপর যে সব কঠোর অবরোধ দিয়েছেন বাইডেনের দলের লোকরা এর সঙ্গে একমত নন। এসব অবরোধের কোনো কোনোটি তুলে নেওয়া হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল

বাইডেন ও তার লোকেরা বলেছেন যে তারা জেরুসালেম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বদলানোর চেষ্টা করবেন না।

তবে তারা ওয়াশিংটনে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের মিশন বন্ধের বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাদের মতে, বাইডেন আবার মিশনটি খুলে দিতে পারেন।

ফিলিস্তিনে অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা আবারও চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক হামলায় সমর্থন দিয়েছিলেন বাইডেন। তবে তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি ইরাককে আর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না।

ইরানকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়াদের বিষয়টি তার প্রশাসন বিশেষভাবে গুরুত্বে নিতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নিপীড়ণের বিরুদ্ধে বাইডেনের পূর্বসূরী বারাক ওবামা জোরালো ব্যবস্থা নেননি বলে তাকে বেশ সমালোচিত হতে হয়েছিল।

কমলা আরব আমেরিকান নিউজকে বলেছিলেন, তাদের প্রশাসন সিরিয়ার সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রপন্থি সংগঠনগুলোর পাশে থাকবে।

ওবামার মতো ট্রাম্প প্রশাসনও সিরিয়ায় কোনো রাজনৈতিক সমাধানে যেতে পারেননি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের ওপর ট্রাম্পের দেওয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বাইডেন তুলে নিবেন বলে মনে করছেন না কেউই।

লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ সংগঠন আশা করছে বাইডেন প্রশাসন তাদের ওপর ‘সর্বাধিক চাপের’ নীতি থেকে কিছুটা হলেও সরে আসবে।

তবে সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের মতো হিজবুল্লাহ ও এর সহযোগীদের ওপর অবরোধ চলমান থাকবে।

গত বুধবার হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ এক জনসমাবেশে ট্রাম্পের পরাজয়ে তিনি খুশি বলে জানিয়েছেন। তবে বাইডেনও তার পূর্বসূরীদের মতো ‘ইসরায়েল-পন্থি’ নীতি অনুসরণ করে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

8h ago