গান জীবন

রুনা লায়লা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

ষাটের দশকে বাংলা গানের আকাশে রুনা লায়লা নামের যে তারার আবির্ভাব হয়েছিল এখনো সেই তারার কণ্ঠের মায়াজালে মুগ্ধ থাকেন শ্রোতারা।

বাংলাদেশের সিনেমায় রুনা লায়লার প্রথম প্লেব্যাক ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গান দিয়ে। এই গানের বাণী রচনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার ছিলেন সুবল দাস। গানটি শ্রোতারা পছন্দ করেছিল দারুনভাবে। তারপর সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে গেয়েছেন। দেশের গানের মধ্যে ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের লেখা দেবু ভট্টাচার্যের সুরে ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যের আগে’ গানটিতে বারবার ফিরে আসেন রুনা লায়লা। অসম্ভব প্রিয় একটা গান তার।

কবি শামসুর রাহমানের লেখা খন্দকার নূরুল আলমের সুরে ‘স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে’ কতোবার ফিরে গেছেন তার ঠিক ঠিকানা নেই। নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা আলাউদ্দিন আলীর সুরে ‘আমায় গেঁথে দাওনা মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা’ শিরোনামের গানে নিজেকে মেলে ধরেছেন বারবার।

আধুনিক ও সিনেমার গানের মধ্যে রয়েছে- গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কী হবে, চঞ্চলা হাওয়ারে, চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা, অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে, বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, পান খাইয়্যা ঠোঁট লাল করিলাম, সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছা করে, বুকে আমার আগুন জ্বলে, ইস্টিশানের রেলগাড়িটা, আয়রে মেঘ আয়রে, হায় রে স্মৃতি বড় জ্বালাময়, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না, ও বন্ধুরে প্রান বন্ধুরে, যখন থামবে কোলাহল, যখন আমি থাকব নাকো, টাকার পিছে দুনিয়া ঘোরে, নদীর মাঝি বলে এসো, সুজন মাঝি রে, এখানে দুজনে নির্জনে, তুমি আজ কথা দিয়েছোসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

আজ এই জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আমেনা লায়লা একজন সংগীত শিল্পী ছিলেন। পাঁচ দশকের সংগীত জীবন বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় গান শোনা গেছে রুনা লায়লার কণ্ঠে।

করোনা মহামারির কারণে জন্মদিনে এবার তেমন আয়োজন না থাকলেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে কিংবদন্তি রুনা লায়লার সুরে ‘এই দেখা শেষ দেখা’ নামে একটি গান প্রকাশিত হবে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন লুইপা, কথা লিখেছেন বরেণ্য গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সংগীতায়োজন করেছেন রাজা ক্যাশেফ।

রুনা লায়লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এবার করোনা মহামারির কারণে জন্মদিন নিয়ে কোনও আয়োজনই থাকছে না। তবে আমার সুরে একটি গান প্রকাশিত হচ্ছে জন্মদিনে। গানটি গাইছে এই প্রজন্মের শিল্পী লুইপা। যেদিন প্রথম ওর কন্ঠে শ্রদ্ধেয় বেগম আখতারের “জোছনা করেছে আড়ি” গানটি শুনি, তখন মুগ্ধ হয়ে অভিনন্দন জানাই। পরবর্তীতে যখন “এই দেখা শেষ দেখা” গানটির সুর করি তখন তাকে গানটি গাইবার জন্য বলেছিলাম। দুর্দান্ত গেয়েছে গানটি। আমার প্রত্যাশার চেয়ে ভালো গেয়েছে।’

সংগীত অসামান্য অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন এই বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী। তার মধ্যে ১৯৭৭ সালে পেয়েছেন ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মোট আটবার। ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবির ‘গল্প কথার’ গানের জন্য সুরকার হিসেবে ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। আর সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন সাতবার। যে গানগুলোর জন্য পুরষ্কার পেয়েছেন সেগুলো হলো- দি রেইন (১৯৭৬), যাদুর বাঁশি (১৯৭৭), অ্যাক্সিডেন্ট (১৯৮৯), অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪), তুমি আসবে বলে (২০১২), দেবদাস (২০১৩), প্রিয়া তুমি সুখী হও (২০১৪)।

রুনা লায়লা বাংলাদেশের প্রথম নারী কণ্ঠশিল্পী যিনি বলিউডের গানে কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছেন। ১৯৭৬ সালে বলিউডের বিখ্যাত সংগীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সুরে ‘এক সে বাড়কার এক’ সিনেমার আইটেম গানে প্রথম কণ্ঠ দেন রুনা। এরপর তিনি ভূপিন্দর সিংয়ের সঙ্গে ‘ঘরোন্দা’ ছবিতে ‘দো দিওয়ানে শেহের মে’ গান করেন। মোহম্মদ রফির সঙ্গে ‘জান-ই-বাহার’ সিনেমার রুনার গাওয়া ‘মার গায়ো রে’ গানটি বেশ আলোচিত হয়। এছাড়াও, বলিউডে ‘ও মেরা বাবু ছেল ছাবিলা মে তো নাচুঙ্গি’, ‘সাপনো কা মান্দির’, ‘অ্যায় দিলওয়ালে আও’ ও ‘কাহো সাখি কাহো’ গানগুলো গেয়েছেন রুনা লায়লা।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its national executive committee member Salahuddin Khan, will file the complaint

2h ago